ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া না দেওয়ার ডাক নতুন মঞ্চের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মাস্টারস্ট্রোক, নাকি ব্যুমেরাং— সেই প্রশ্নে যখন দেশজোড়া বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখন ওঁরা পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রীর। স্বাগত জানালেন নোট বাতিলের মতো ‘দুর্দান্ত সিদ্ধান্তকে’।

Advertisement

অনির্বাণ সেন

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

প্রচার চলছে অরাজনৈতিক মঞ্চের। নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মাস্টারস্ট্রোক, নাকি ব্যুমেরাং— সেই প্রশ্নে যখন দেশজোড়া বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখন ওঁরা পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রীর। স্বাগত জানালেন নোট বাতিলের মতো ‘দুর্দান্ত সিদ্ধান্তকে’।

Advertisement

ওঁরা আর কেউ নয়— ময়ূরেশ্বরের জনা দশেক যুবক। কেউ অ্যাম্বুল্যান্স চালক, কেউ ব্যবসায়ী কেউবা গৃহশিক্ষক আবার কেউ দিনমজুর। অরাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে মোদীর নতুন অর্থ-নীতির পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেই সঞ্জয় দাস, বাসুদেব দে, অজয় দে’রা।

বৃহস্পতিবার এঁদের দেখা গেল ময়ূরেশ্বরের নানা জনবহুল এলাকায়। থানার মোড়, ক্যানাল অফিস মোড়, ময়ূরেশ্বর হাট— বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মাইক্রোফোন হাতে নিজেদের মতো করে ‘প্রচার’ সারলেন ওঁরা। সঙ্গে শ্লোগান— ‘আয়রে আয় গরিব দুঃখী / নতুন টাকায় আমরা খুশি’— ‘দিনবদলের সাথে সাথে / টাকা আসবে মানুষের হাতে’।

Advertisement

কেন এমন ভাবনা, তার ব্যাখাও দিলেন দিনমজুর রূপ মুর্মু, প্রভাত গড়াইরা। তাঁদের কথায়, ‘‘কিছু মানুষ ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েও দিনের পর দিন পায়ের উপরে পা তুলে কাটিয়ে দিচ্ছে। আর তার ভার বইছি আমরা গরিব-গুর্বোরা! জিনিসের দাম বাড়ছে। বেকার সমস্যাও বাড়ছে। দেশ ছেয়েছে জাল টাকায়। তার মোকাবিলা করার মতো সাহস মোদী দেখাতে পেরেছেন। আর আমরা তাঁর পাশে থাকব না!’’ জানাতে ভুলছেন না, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার পাশে নয়, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে। এবং সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের গুণেই।

আগামী ক’টা দিন ‘দেশের স্বার্থে’ এই প্রচার জারি রাখতে চান তাঁরা। প্রয়োজনে হাটে হাটে ঘুরে, কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়েও। কী বোঝাবেন?

সঞ্জয়, বাসুদেবরা বলছেন, ‘‘কেউ যেন শত প্রলোভনেও নিজের অ্যাকাউন্ট ভাড়া না দেন। কারও টাকা নিজের ব্যাঙ্কের তথ্য দিয়ে ভাঙাতে সাহায্য না করেন, এগুলোই বোঝাব। কেননা, তেমনটা হলে দেশ থেকে কালো টাকা নিমূল হবে না! গোটা পরিকল্পনাটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।’’

উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রচারের শুরুতেই ফল মিলতে শুরু করেছে। অনেকেই তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, নিজেদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে দিয়ে অন্যের সুবিধে করে দেবেন না। সেটা যে শুধু কথার কথা নয়, তার প্রমাণও মিলল। ময়ূরেশ্বর বাজারে কথা হচ্ছিল মাংস বিক্রেতা আনোয়ার শেখ-এর সঙ্গে। আনোয়ার জানাল, এর আগে অনেকেই তাঁকে অ্যাকাউন্ট ভাড়়া দিয়ে টাকা বদলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিছু টাকার শর্তে আনোয়ার রাজিও হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সে বলছে, ‘‘কাজের চাপ ছিল বলে পারিনি। এখন প্রচার শুনে বুঝতে পারলাম ভাগ্যিস সেটা করিনি!’’ একই প্রস্তাব পেয়েছিলেন সব্জি বিক্রেতা সরমা দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘চার হাজার পাল্টে দিলে ২০০ টাকা দেবে বলেছিল। এখন দেখছি সময়ের অভাবে যে কাজ করতে পারিনি তাতে ভালই হয়েছে।’’

এমন কিছু অভিজ্ঞতাই উৎসাহ দিচ্ছে ওঁদের। বাজারে প্রচার সেরে মঞ্চের মিছিল যখন ক্যানেল অফিস মোড়ের দিকে ঘুরছে তখনও মাইকে ভেসে আসছে ঘোষণা... ‘আমরা মোবাইলের সিমের জন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, রেস্টুরেন্টে লাইনে দাঁড়াতে পারি। মদের দোকানের লাইনে দাঁড়িয়েও পানীয় কিনতে পারি। আর দেশের ভালর জন্যে একটু ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে পারব না!’

এই দলে ‘টিম লিডার’ বলে কেউ নেই। ফি-সন্ধ্যার আড্ডা দিতেন এই মঞ্চের সদস্যেরা। সেই মজলিসেই এক দিন ঠিক হয়, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমআদমির মধ্যে প্রচার করবেন। সেই মতো লেগে পড়া। খরচ আসছে কোথা থেকে? মঞ্চের সদস্য স্কুল শিক্ষক অজয়বাবু জানালেন, হাতখরচা বাঁচিয়েই চলে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘একটা মাইক আর ভ্যান বই আর তো কিছু লাগছে না।’’

এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায় অবশ্য মনে করেন, ‘‘অরাজনৈতিক নয়, প্রচার পেতে বিজেপি আড়াল থেকে এ সব করছে।’’ বিজেপি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা রাজ্য কমিটির সদস্য অর্জুন সাহা অবশ্য তেমনটা মানতে চাননি। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘এটা বিজেপি-র কোনও কর্মসূচি নয়। ওই মঞ্চ অরাজনৈতিক বলেই জানি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন