পথভোলা হরিণ শিকারের অভিযোগ

মোষগুলো হঠাৎ চেঁচাচ্ছে কেন জানতে ঘরের বাইরে এসেছিলেন মানবাজারের দোলাডাঙার বাসিন্দা শঙ্কর মুদি। তিনি দেখেন, মোষগুলোর খুব কাছে একটা হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ হরিণ দেখে তিনি একটু অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০১:১১
Share:

বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক।— ফাইল চিত্র।

মোষগুলো হঠাৎ চেঁচাচ্ছে কেন জানতে ঘরের বাইরে এসেছিলেন মানবাজারের দোলাডাঙার বাসিন্দা শঙ্কর মুদি। তিনি দেখেন, মোষগুলোর খুব কাছে একটা হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ হরিণ দেখে তিনি একটু অবাকই হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

ধগড়া গ্রামের আর এক বাসিন্দা একদিন দুপুরে দেখেন, তাঁর ছাগলদের সঙ্গে একটা বাচ্চা হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে হরিণবাচ্চা এক লাফে জঙ্গলে ঢুকে যায়। বেশ কিছুদিন আগে দোলাডাঙা প্রাইমারি স্কুলের চত্বরে তিনটি বাচ্চা-সহ চারটি হরিণের দল ঢুকে পড়েছিল।

এই হরিণের পাল বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর জলাধারের বনপুকুরিয়া মৃগদাব থেকে লোকালয়ে চলে এসে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তারা শিকারিদের লক্ষ্যভেদ হচ্ছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় জাল, কুঠার, তির, ধনুক নিয়ে মাঝে মধ্যেই শিকারিদের ঘোরাঘুরি করচতে দেখা যাচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, বুনো শুয়োর শিকারের নামে হরিণ শিকার করে বস্তাবন্দি করে বাইরে পাচার করা হচ্ছে। ফলে সংরক্ষিত এলাকার হরিণদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

বনপুকুরিয়া মৃগদাব আসলে হরিণদের জন্য সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে পড়ে। ৪৪ হেক্টর এলাকা তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা। এলাকাটি বাঁকুড়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও মাঝখানে জলাধার থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম নয়। নৌকায় পারাপার করতে হয়। পুরুলিয়ার মানবাজার থেকেও বনপুকুরিয়া যাতায়াত করা যায়। তবে সেই রাস্তাটি ভাঙাচোরা।

মৃগদাব লাগোয়া বাঁকুড়া জেলার নারকলি, গোপালপুর ও পুরুলিয়া জেলার দোলাডাঙা, ধগড়া প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই মৃগদাব থেকে প্রায়ই হরিণের দল কোনও ভাবে বেরিয়ে আসছে। কারণ গত কয়েক দশক আগে মৃগদাবের চারপাশে লাগানো কাঁটাতারের বেড়া অনেক জায়গাতেই নষ্ট হয়ে পড়েছে। সেই ফাঁক গলেই হরিণরা বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা এ জন্য বন দফতরের বিরুদ্ধে নজরদারির অভিযোগ তুলেছেন।

বন দফতর সূত্রে খবর, একজন বিট অফিসার মৃগদাবের দায়িত্বে থাকার কথা। পরিবর্তে সেখানে মাত্র দু’জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। বনকর্মীরা জানান, বুনো শুয়োররা মাটি আলগা করে কাঁটাতারের নীচের অংশে গর্ত করে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ছে। ওই ফাঁক দিয়ে কয়েকটি হরিণের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় তাঁদের পক্ষেও ঠিকমতো নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

রানিবাঁধ রেঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইঁদপুরের রেঞ্জ অফিসার কেশব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের দফতরে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। অফিসার এবং কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় হরিণ শিকারের নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন