ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাউন্টার থেকে কী ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছিল, মনিটরে তা দেখছেন আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র
উপস্থিত মানুষজনের তৎপরতায় দু’টি কেপমারির ঘটনা রুখল পুরুলিয়ায়। দু’টি ঘটনায় মোট তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রথম ঘটনাটি বুধবার পুরুলিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি সমবায় ব্যাঙ্কের শাখার। বেলা প্রায় ১২টা। ব্যাঙ্কের ভিতরে থিকথিক করছে গ্রাহকদের ভিড়। সেই সুযোগে একটি ফাঁকা ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকার বান্ডিল চুরি করতে গিয়ে এক কর্মীর তৎপরতায় বমাল ধরা পড়ে এক কেপমার। তবে ঘটনার পরে ব্যাঙ্কটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গ্রাহকেরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যাঙ্কে গিয়ে লোকটিকে আটক করে।
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় ক্যাশিয়ার চেয়ারে ছিলেন না। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে সবার চোখ এড়িয়ে সরাসরি কাউন্টারে ঢুকে পড়ে এক কেপমার। থলি হাতে এক জনকে ফাঁকা কাউন্টারের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় এক ব্যাঙ্ক কর্মীর। মনোজ কুমার নামে ওই কর্মী বলেন, ‘‘আমি শৌচালয় থেকে বেরিয়েই দেখি কাউন্টারে অচেনা একটা লোক। চোখাচোখি হতেই সরে পড়ার চেষ্টা করছিল। আটকে ফেলে আমি বাকিদের ডেকে আনি।’’
গোলমাল শুনে ব্যাঙ্কের অন্য কর্মীরা কাউন্টারে জড়ো হন। লোকটিকে আটকে রেখে আধিকারিকেরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। ব্যাঙ্কটির ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘একটি যন্ত্রে সমস্যা হওয়ায় ক্যাশিয়ার একটু উঠে গিয়েছিলেন। সিসিটিভিতে দেখা যায়, লোকটি কাউন্টার থেকে টাকার বান্ডিল তুলে থলিতে ভরে নিচ্ছে। তাকে চেপে ধরতেই সেই টাকা মেলে।’’ ওই সমবায় ব্যাঙ্কের সিইও সাগর সান্যাল বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে আগে থেকে ব্যাঙ্কে এসে কোন পথে কাউন্টারের ভিতরে ঢোকা যায় তা ভালভাবে ছকে রাখা হয়েছিল। ওই কেপমারের থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে।’’
ঘটনার পরে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন গ্রাহকেরা। তবে সিইও নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রয়েছে বলে মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নজরদারি ছিল বলেই বামাল লোকটিকে আটক করা গিয়েছে।’’ কিন্তু কী ভাবে সোজা কাউন্টার পর্যন্ত কেপমার পৌঁছে গেল, ওই কর্মীর চোখে বিষয়টি না পড়লে কী হত তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গ্রাহকদের একাংশ। সাগরবাবু বলেন, ‘‘আমরা পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবো।’’
অন্যদিকে মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের গাড়িখানা এলাকা থেকে দুই ছিনতাইবাজকে বমাল ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন দুপুরে গাড়িখানা এলাকায় একটি পাড়ার রাস্তা দিয়ে এক মহিলা যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে দু’জন হঠাৎ এসে তাঁর হার ছিনতাই করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ওই মহিলার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে ছিনতাইবাজেরা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু উপস্থিত লোকজন তাদের ধরে ফেলে। ওই দু’জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম দীননাথ সোনার ও ইনসাফ আলি। দু’জনেই ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার পিঞ্জরাজোড়া থানা এলাকার মোহনডির বাসিন্দা। গনপিটুনিতে আহত হয়ে দীননাথ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইনসাফ আলিকে বুধবার আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন ফাঁকা রাস্তায় এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাস দুয়েক আগে নর্থলেক রোড বাই লেনে এক প্রৌঢ়াকে একা পেয়ে গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইবাজেরা। পড়ে গিয়ে প্রৌঢ়ার হাত ভেঙে যায়।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরে আমাদের নজরদারি চলছে। সেই ফাঁদেই দুই ছিনতাইবাজ ধরা পড়েছে।’’