জনস্বার্থে: জেলা পুলিশের লিফলেট। নিজস্ব চিত্র
প্রাণঘাতী গেম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে জেলার মানুষকে সতর্ক করতে লিফলেট প্রকাশ করল বীরভূম পুলিশ। লিফলেটে কী করতে হবে আর কী করলে চলবে না, এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। কিছু দিন আগে পাড়ুই থানার কেন্দ্রডাঙাল গ্রামের ব্যবসায়ী মহম্মদ আবদুল কুদ্দুসের কাছে মোমো খেলার জন্য হোয়াটস্আপে বার্তা আসে। তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে একই জিনিস ঘটে বোলপুরের মকরমপুরে। একটি অজানা নম্বর থেকে মেসেজ আসে মকরমপুরের বাগানপাড়ার বাসিন্দা সুনিতা অধিকারীর ফোনে। সিম কার্ডটি তাঁর নামে হলেও ব্যবহার করেন তার ছেলে, যে নাবালক। বিষয়টি জানিয়ে বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ
দায়ের করা হয়েছে।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা আটটা নাগাদ অজানা নম্বর থেকে ‘হাই আই অ্যাম মোমো’ লেখা মেসেজ আসে। তার পরেই আসে ‘মোমো’ খেলার আমন্ত্রণ। কোনও উত্তর না পেয়ে ওই একই নম্বর থেকে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মেসেজ আসে ‘আই উইল কিল ইউ’। এর পর ভয় পেয়ে ফোন বন্ধ করে দেয় ওই নাবালক। রাতেই খবর দেওয়া হয় স্থানীয় কাউন্সিলরকে। তিনি এবং পরিবারের লোক গিয়ে বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় কাউন্সিলর সুরজিৎ বটব্যাল জানান, পুলিশ যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এ রকম ঘটনা যার সঙ্গেই হোক না কেন, আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে জানানো দরকার।
পথে নেমে কাজ করা শুরু করেছে বীরভূম জেলা পুলিশও। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও লিফলেট ছাপানো হয়েছে। যেটিতে যে কোনও অনলাইন আত্মঘাতী কিংবা হিংসাত্মক খেলা থেকে শিশুকে বিরত রাখা, অনলাইনে খেলার আবেদন পেলে তা নিকটবর্তী থানায় জানানো, বাড়ির কেউ কোনও অস্বাভাবিক আচরণ করলে তা খেয়াল রাখা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ‘লগ ইন পাস কি’ নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিবর্তন করা, ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ কিংবা ‘টু লেয়ার সিকিউরিটি’ গ্রহণ করা, হোয়াটস্আপের গোপনীয় তথ্য ‘মাই কন্ট্যাক্ট’ করা, মোমো-র ইমেজ এবং লিঙ্ক কোনও নম্বর থেকে এলেই সেটি ব্লক করে পুলিশ, প্রশাসনকে খবর দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে গুগল ‘প্লে স্টোর’ কিংবা অন্য কোনও লিঙ্ক থেকে মোমো নামের কোনও গেম ডাউনলোডের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জেলা পুলিশের তরফে। বাচ্চাদের ইন্টারনেটে দীর্ঘ সময় যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের প্রশ্রয় না দিতেও আর্জি জানানো হয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মোমো আদতেও কোনও গেম নয়। এর পিছনে রয়েছে সাইবার ক্রাইম। নতুন ভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। যে নম্বরগুলির সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত রয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই নম্বরগুলিতেই আসছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
মোমো কেন বিপজ্জনক?
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। হিংসা, এমনকি আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করে। ব্যবহারকারী নানা রকমের হয়রানির শিকার হতে পারেন। ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়ে যেতে পারে, ‘হ্যাকিং’-এর দৌলতে। ব্যবহারকারী মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও অনিদ্রাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সাইবার বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, হানাদারদের পাঠানো লিঙ্কে না ক্লিক করলে বা তাদের পাঠানো মেসেজ না খুললে ওই মারণ গেমের ফাঁদে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।