নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্যামসুন্দরের মায়ের নালিশে ধন্দে পুলিশ

স্থান, কাল, ঘটনার বিবরণ— সবই এক। গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন এক জনই। কিন্তু একই খুনের ঘটনায় দু’টি পৃথক অভিযোগে বদলেছে অভিযুক্তদের নাম। কোন অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে দোটানায় পুলিশ।

Advertisement

সিউড়ি

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ১০:৪৬
Share:

স্থান, কাল, ঘটনার বিবরণ— সবই এক। গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন এক জনই। কিন্তু একই খুনের ঘটনায় দু’টি পৃথক অভিযোগে বদলেছে অভিযুক্তদের নাম। কোন অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে দোটানায় পুলিশ।

Advertisement

মনোনয়ন জমা দেওয়ার অতিরিক্ত দিন সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যায় দিলদার খান খুনের ঘটনার তদন্তে এমনই পরিস্থিতির মুখে বীরভূম পুলিশ। ওই ঘটনায় আগে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজেপির দাবি, তাঁরা সকলেই তাদের দলের কর্মী। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে আরও এক জনকে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম প্রণব মাল। হাসনাবাদ থেকে তাঁকে ধরা হয়। আদালত তাঁকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। বিজেপি জানিয়েছে, তিনিও তাদের দলের সদস্য।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত সোমবার ভাইয়ের স্ত্রী-র মনোনয়ন জমা দিতে তাঁর সঙ্গে ব্লক অফিসে যাওয়ার পথে কড়িধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন ছোড়া গ্রামের ভাটিপাড়ার বাসিন্দা দিলদার খান। নিহত কোন দলের সমর্থক তা নিয়ে টানাপড়েন চলে বিজেপি, তৃণমূলের। সামান্য সময়ের ব্যবধানে দু’পক্ষের দাবিকেই সমর্থন জানিয়েছিল পরিবার। তবে তাঁদের অবস্থান বদলে যায় সে দিন বিকেলেই। তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে নিহতের স্ত্রী লুৎফা বিবি এবং বাবা তহিদ খানেরা জানিয়ে দেন— বিজেপি নয়, দিলদার ছিলেন তৃণমূল কর্মী।

Advertisement

সে দিন রাতে নিহতের পরিবার সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগে জানায়, বিজেপির স্থানীয় নেতা শ্যামসুন্দর গড়াইয়ের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হামলায় মারা গিয়েছেন দিলদার। বিজেপি অভিযোগ করেছিল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে শ্যামসুন্দর গড়াই মারাত্মক জখম হয়েছিলেন।

পুলিশের অন্দরমহলের খবর, নিহতের পরিবার ঘটনার জন্য যে বিজেপি নেতাকে দায়ী করছেন, সেই আহত নেতার মায়ের দায়ের করা অভিযোগের পর সমস্যা বেড়েছে।

ঘটনার পর দিন শ্যামসুন্দর গড়াইয়ের মা শেফালি গড়াই সিউড়ি থানায় অভিযোগে লিখেছেন— ‘সে দিন মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময় আমার ছেলের সঙ্গী ছিল দিলদার খান। কড়িধ্যার স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার নির্দেশে কয়েক জন সশস্ত্র লোক আমার ছেলে ও দিলদারকে আক্রমণ করে। গুলি করে দিলদারকে খুন করে। বোমায় মারাত্মক জখম হয় আমার ছেলে। সে এখন কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন। আহত ছেলের কাছ থেকে সব শুনে অভিযোগ করছি।’ ওই অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের নামও লিখেছেন শেফালিদেবী।

পুলিশ মহলে প্রশ্ন উঠছে, নিহতের বাবার দায়ের করা অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হলে কেন একই ঘটনার অন্য একটি অভিযোগ গুরুত্ব পাবে না? যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁর ছেলেও আহত। নিহতের বাবার অভিযোগে নির্দিষ্ট কোনও নাম ছিল না। শেফালিদেবীর অভিযোগে নির্দিষ্ট নাম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে না? জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা শুধু মূল ঘটনার তদন্তের উপরেই জোর দিচ্ছি।’’

একই ঘটনার দু’টি পৃথক অভিযোগ নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগে মাঠে নামতে তৈরি বিজেপি। এ বিষয়ে দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘সোমবারের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত শাসক দলের কেউ ধরা পড়ল না, অথচ আমাদের দলের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হল। আমরা এ নিয়ে সরব হবো।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement