প্রবাল-স্মৃতিতে বারিকুলে পুলিশ ফেরাল বিস্মৃত দাড়িয়া

গ্রামবাংলার বহুল প্রচলিত এই খেলার নাম কোথাও দাড়িয়া বা দা়ড়িয়াবান্দা, কিংবা গাদি অথবা নুনচিক। এ বার এই খেলাকে তুলে ধরতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বারিকুল শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩৭
Share:

মাটি কামড়ে: বারিকুলে ফাইনাল খেলার একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র

সৈনিকের মতো ঘর আগলে রাখবে একটি দল। আর অন্য দলের এক জন প্রতিনিধিকে যে ভাবেই হোক ঢুকে পড়ে সব ক’টি খোপ পার হয়ে আসতে হবে। আর না হলেই ‘আউট’!

Advertisement

গ্রামবাংলার বহুল প্রচলিত এই খেলার নাম কোথাও দাড়িয়া বা দা়ড়িয়াবান্দা, কিংবা গাদি অথবা নুনচিক। এ বার এই খেলাকে তুলে ধরতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। এতদিন যে কোনও উপলক্ষে পুলিশ ফুটবল, ভলিবল প্রভৃতি খেলার আয়োজন করত। কিন্তু মাওবাদীদের বোমায় নিহত বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্তের মৃত্যু দিবসে রবিবার বারিকুল থানা এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের ছেলেদের নিয়ে দাড়িয়া খেলা প্রতিযোগিতা করল পুলিশ প্রশাসন। এই প্রতিযোগিতায় মোট আটটি দল যোগ গ্রহণ করেছিল। ফাইনালে বারিকুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ছেলেদের হারিয়ে জয়লাভ করে রাউতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দল।

লোক সংস্কৃতির গবেষক মেদিনীপুরের বাসিন্দা মধুপ দে জানান, দাড়িয়া জঙ্গলমহল এলাকার অতি প্রাচীন খেলা। এক সময় দৈহিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এই সব এলাকার রাজাদের পাইকরা দাড়িয়া খেলত। তাঁর কথায়, “প্রাচীন যুদ্ধরীতির একটি আনন্দময় রূপদানই হল দাড়িয়া খেলা। তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই খেলায় আগ্রহ হারাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে বাঁকুড়া পুলিশের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী।”

Advertisement

বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার কথায়, “বহু প্রাচীন খেলা রয়েছে, যেগুলি আজকাল আর সে ভাবে দেখা যায় না। ওই সব পুরনো খেলা নিয়ে নতুন করে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তাই স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে দড়িয়া খেলার প্রতিযোগিতা করলাম। ভাল সাড়াও পাওয়া গিয়েছে।”

দড়িয়া খেলার ফাইনালে জয়ী রাউতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত দলের অধিনায়ক শম্ভুনাথ মুর্মু বলেন, “সেই ছেলেবেলায় দাড়িয়া এই খেলা খেলেছি। পুলিশের উদ্যোগে ফের খেলার মাঠে ফিরলাম। আমাদের খেলতে দেখে এলাকার ছেলেমেয়েরাও নতুন করে উৎসাহিত হয়েছে।”

২০০৫ সালের জুলাই মাসে বারিকুল থানার তৎকালীন ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত মাজডিহা এলাকায় মাওবাদীদের বোমা ঠাসা ব্যাগ খুলতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। প্রবালবাবুর স্মৃতিতেই রবিবার বারিকুলে নানা অনুষ্ঠান করে বাঁকুড়া পুলিশ। মাজডিহায় প্রবালবাবুর স্মৃতিতে একটি শহিদ বেদি তৈরি করা হয়। এরপর বারিকুল থানায় স্থানীয় পড়ুয়াদের শিক্ষাসামগ্রী প্রদান ও দড়িয়া খেলা প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচ হয়। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) দেবর্ষি দত্ত, এসডিপিও (খাতড়া) বিশপ সরকার, বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী কৃত্তিবাসানন্দ। স্বামী কৃত্তিবাসানন্দের কথায়, “এই উদ্যোগ এলাকার যুব প্রজন্ম ও পড়ুয়াদের বিশেষ অনুপ্রাণিত করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন