ডাইনি বা অপদেবতা তাড়ানোর নামে সালিশি সভা বসালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় গিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা এই হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরের দিন শনিবার দুপুরে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ তোলা প্রৌঢ়াকে বাড়ি ফেরাল পুলিশ। গ্রামে বসানো হল পুলিশ পিকেট। তবুও ওই নির্যাতিতা ফের আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন।
পুরুলিয়া শহরের প্রান্তে খেজুরিয়াডাঙায় একটি পরিবারের কর্ত্রীকে ডাইনি অপবাদের জেরে নিগ্রহ এবং গোটা পরিবারকে ঘরছাড়া করার ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি হইচই পড়ে। ওই পরিবারের অভিযোগ, প্রৌঢ়াকে প্রথমে ডাইনি অপবাদ দিয়ে, পরে গয়ায় নিয়ে গিয়ে ‘শরীরে ঢুকে থাকা অপদেবতা’ তাড়ানোর খরচ আদায় করে পড়শিরা। অথচ, বন্ধ হয়নি মানসিক নির্যাতন, শারীরিক নিগ্রহ। তাই সপরিবার বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ওই পরিবারকে বাড়িতে ফেরায়। তবে প্রৌঢ়া বাড়িছাড়া ছিলেন।
শনিবার নির্যাতিতাকে পুলিশ তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাল লাগছে না। সকলেই এ ভাবে ডাইনি বলছে। অপমানেই চলে গিয়েছিলাম। এখনও ভয় হচ্ছে। জানি না কী হবে।’’ তবে ওঝা পিন্টু দাস এ দিন বলেন, ‘‘আমি ঝাড়ফুঁক ইত্যদি বন্ধ করে দেব। আর ও সব করবো না।’’ জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত্রে ওই মহিলাকে বান্দোয়ান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ওই এলাকায় এখনও পুলিশ পিকেট থাকবে। আমরা দেখছি ওখানে সচেতনতা প্রচার করা যায় কি না।’’
শুক্রবার সকালে বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা এলাকায় গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালান। তবে তাঁদের সেদিনই নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছেন, এলাকায় থাকার মতো তাঁদের পরিস্থিতি নেই। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ায় তাঁদের নানা টিপ্পনি শুনতে হচ্ছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে শুক্রবার রাতেই শান্তি বৈঠক করেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দু মাহালি। ছিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালিও। বৈঠকে এলাকার মহিলারা ও অন্য বাসিন্দারাও ছিলেন। নবেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ডাইনি বা ভূত বলে কিছু নেই। এটা সকলের কাছে পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন।’’ নয়নবাবু জানান, ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স আইন, ১৯৬১ মোতাবেক তাবিজ, কবজ, তুকতাক ইত্যাদিকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করলে বিধি মোতাবেক জেল ও জরিমানা দুই-ই হতে পারে। এরপরেই নবেন্দুবাবু বলেন, ‘‘যা ঘটনা ঘটেছে তা সকলকে মিটিয়ে নিতে হবে।’’
যদিও শনিবারের বৈঠকে নবেন্দুবাবু এই ধরনের ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার তিনি এ প্রসঙ্গে দাবি করেন, ‘‘কেউ নির্যাতিত হলে পুলিশের কাছে যেতেই পারেন। এ নিয়ে আমরা আর কিছু বলিনি।’’