বাঁকুড়া মেডিক্যাল

ফের মারপিট, বিতর্কে সেই জুনিয়র ডাক্তার

ফের মারপিটের ঘটনায় নাম জড়াল জুনিয়র ডাক্তারদের। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার জেরে ফের উত্তেজনা ছড়াল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর করতে গিয়ে পুলিশের সামনেই আক্রান্ত হলেন সাংবাদিক। এক রোগীর পরিবারের লোকজন এবং হাসপাতালেরই নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠলেও সব অস্বীকার করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:৩৭
Share:

গণ্ডগোলের পরে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ।— নিজস্ব চিত্র।

ফের মারপিটের ঘটনায় নাম জড়াল জুনিয়র ডাক্তারদের। মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার জেরে ফের উত্তেজনা ছড়াল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর করতে গিয়ে পুলিশের সামনেই আক্রান্ত হলেন সাংবাদিক। এক রোগীর পরিবারের লোকজন এবং হাসপাতালেরই নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠলেও সব অস্বীকার করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পুলিশের কাছেও জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

Advertisement

কী হয়েছিল এ দিন?

হাসপাতাল সূত্রে খবর, পেটে পাথর হওয়ায় সোমবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন হিড়বাঁধের কালীবালা ধীবর। এ দিন দুপুরে তাঁর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয়। তারই রিপোর্ট ওয়ার্ডে ডিউটিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের দেখাতে গিয়েছিলেন কালীবালাদেবীর ছেলে অমিয় ধীবর। কিন্তু, রিপোর্ট দেখতে জুনিয়র ডাক্তাররা অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ অমিয়বাবুর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “রিপোর্ট দেখতে না চাওয়ায় আমি প্রতিবাদ করি। আমার সঙ্গে বচসা শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিছু বুঝে ওটার আগেই আমাকে ওরা মারধর করতে শুরু করেন। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে আমাকে ছাড়ায়।’’ যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, রোগীর আত্মীয়েরাই মারধর করেছিলেন তাঁদের। নিরাপত্তারক্ষীরা পুরো ঘটনা দেখেও গা করেননি।

Advertisement

এর পরেই দল বেঁধে জুনিয়র ডাক্তাররা সুপারের রুমে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ জানান। সুপার নিরাপত্তারক্ষীদের রুমে ডেকে পাঠালে এ বার সুপারের সামনেই প্রবল কথাকাটাকাটি শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তার ও নিরাপত্তারক্ষীদের। সেই সময় খবর সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক। অভিযোগ, ছবি তুলতে দেখে কিছু জুনিয়র ডাক্তার ওই সংবাদিককে সুপারের রুম থেকে টানতে টানতে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করতে থাকেন। তাঁর ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কোনও মতে ক্যামেরা বাঁচানো গেলেও অভিযোগ, ঘটনার সময়কার তোলা ছবি মুছে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত দু’জন পুলিশকর্মী ওই সাংবাদিককে মারমুখী ডাক্তারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকর্মীদের ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ওই সাংবাদিকের দাবি, “কেন আমি সুপারের রুমে ছবি তুলছি, এই প্রশ্ন করতে করতে ওরা আমাকে মারছিল। বেধড়ক কিল ঘুঁষি, চড়, লাথি মারার পর রুমেই ফেলে রেখে পালায় জুনিয়র ডাক্তাররা।’’

হাসপাতালে মারপিটের খবর পেয়ে ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ এবং বাঁকুড়া সদর থানার আইসি বিশ্বজিৎ সাহা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মারধরের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের বক্তব্য, “হাসপাতালে প্রায়ই রোগীর আত্মীয়েরা আমাদের মারধর করেন। এর আগেও এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা আগেও সুপারকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করার আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তা হয়নি। তারই প্রতিবাদে এদিন আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি।’’ তাঁদের আরও দাবি, সাংবাদিক বা পুলিশকর্মীদের তাঁরা আদৌ মারধর করেননি।

যদিও ঘটনা হল, এই প্রথম নয়। এর আগেও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ জুনিয়র ডাক্তারদের তাণ্ডবের সাক্ষী থেকেছে। এর আগেও মার খেয়েছেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু কোনও বারই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ। বরং নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে রোগীদের দুর্ভোগে ফেলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এ বারও পুরো ঘটনাটি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন