আহত পুলিশ কর্মী।—নিজস্ব চিত্র
পুলিশের গাড়িতে ঘটা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের হাতে আক্রান্ত হলেন বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার কিছু পুলিশকর্মী। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন এক জন এএসআই। পুলিশের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকর্মীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোনামুখীর রামপুর এলাকার এই ঘটনায় ১৬ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জখম এএসআই সঞ্জয় চৌধুরী মাথায় চোট নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় সঞ্জয়বাবুর নেতৃত্বে রামপুর এলাকার সোনামুখী-বেলিয়াতোড় রাস্তায় পুলিশের একটি ভ্যান টহল দিচ্ছিল। সেই সময় এলাকারই এক ব্যক্তি পুলিশের গাড়ির সামনে পড়ে গিয়ে চোট পান। পুলিশের দাবি, ওই গ্রামবাসী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। দুর্ঘটনার পরেই পুলিশের মোবাইল ভ্যান ঘিরে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে স্থানীয় লোকজন। পুলিশের অভিযোগ, এসএসআই সঞ্জয়বাবু ও বাকি পুলিশকর্মীরা গাড়ি থেকে নেমে প্রতিরোধ করতে গেলে টাঙ্গি, রড, লাঠি নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। সঞ্জয়বাবুর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয় বাকি পুলিশকর্মীদেরও মারধর করা হয়। তাঁদের দু’টি মোবাইল ছিনতাই করা হয়। হামলার খবর পেয়ে পুলিশের আরও একটি মোবাইল ভ্যান ঘটনাস্থলে এলে সেটিকে লক্ষ করেও এলাকাবাসীর একাংশ ইট-পাটকেল ছোড়েন বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য হামলাকারীরা চম্পট দেয়।
জখম পুলিশ কর্মী এবং পুলিশের গাড়িতে দুর্ঘটনার মুখে পড়া গ্রামবাসীকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সঞ্জয়বাবুর চোট গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রেফার করা হয়। এই ঘটনার পরে রাতেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) অভিযোগ দায়ের করে এলাকায় ধরপাকড় শুরু করে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় রামপুরে। রাতেই গৌতম ঘোষ, সুশান্ত ঘড়ুই, প্রহ্লাদ ঘোষ, তিলক ঘোষ, সাধন ঘড়ুই, প্রশান্ত ঘড়ুই, অরুণ লোহার, সুরজিৎ ঘোষ, শিবু ঘোষ, সুকুমার ঘোষ, মিলন ঘোষ, মদন ঘড়ুই, সুকুমার ঘড়ুই, রমেশ ঘোষ, নীশিকান্ত ঘড়ুই ও মনোজ ঘোষ নামের ১৬ জন বাসিন্দাকে পুলিশের উপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের মতো জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার ধৃতদের বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও বেশ কিছু অভিযুক্ত পলাতক। তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা এবং বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার সোনামুখী থানায় যান। সুখেন্দুবাবু বলেন, “পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
কিন্তু, সামান্য এক দুর্ঘটনাকে ঘিরে কেন পুলিশের উপরে হামলা? এই জনরোষের কারণ কী?
স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্গাপুজোর সময় রামপুর এলাকার একটি দুর্গাপুজো কমিটি রাস্তা আটকে চাঁদা তুলছিল। পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চাঁদা তোলা বন্ধ করে। ওই পুজো কমিটির সদস্যদের একাংশ পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিলেন। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপর হামলা চালানোর পিছনে সেই ক্ষোভ রয়েছে বলেই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। তবে, পুলিশ যে-ভাবে ধরপাকড় শুরু করেছে, তার জেরে গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, পুলিশের উপর হামলায় তাঁদের কোনও যোগই ছিল না। সোনামুখীর ঐতিহ্যবাহী কালী ভাসান দেখতে রামপুরের বিভিন্ন বাসিন্দাদের বাড়িতে আত্মীয় পরিজনেরা এসেছিলেন। পুলিশ তাঁদের মধ্যেও কয়েক জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছে
বলে অভিযোগ।
সোনামুখীর পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাক। তবে, কালী ভাসান দেখতে ওই এলাকায় বাইরে থেকে অনেক মানুষ এসেছেন। পুলিশ যাতে অকারণে নিরীহ মানুষদের হয়রান না করে, সেই আবেদন করছি।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক হয় ও নির্দোষ ব্যক্তিরা যাতে সাজা না পায়, সেই দিকটিও দেখা পুলিশের দেখা কর্তব্য।’’