পুলকার উল্টে চোট ৯ পড়ুয়ার

সেই সময় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের একটি মোবাইল ভ্যান ছিল। পুলিশ কর্মীরাও উদ্ধারে হাত লাগান। খবর পেয়ে অন্য গাড়িতে আরও কিছু পুলিশ কর্মী এসে আহত পড়ুয়াদের নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রওনা দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫২
Share:

দুর্ঘটনা: বাঁকুড়ার হেভির মোড়ের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে স্কুল ভ্যান। নিজস্ব চিত্র

স্কুল থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে ফেরার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে গড়িয়ে জলাজমিতে পড়ে গেল একটি পুলকার। কপাল জোড়ে অল্পের উপর দিয়ে রক্ষা পেল বাঁকুড়ার ডিএভি স্কুলের কিছু পড়ুয়া। এই ঘটনায় জখম হয় ওই পুলকারে থাকা ন’জন ছাত্রছাত্রী। তবে এক জন বাদে বাকিদের হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, বাঁকুড়া সদর থানার হেভিরমোড় লাগোয়া এলাকায়। দুর্ঘটনার পরে পুলিশ জখম পড়ুয়াদের উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠায়। হাসপাতালে আট জন পড়ুয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সপ্তশ্ব পালের মাথায় চোট থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ছাত্রের মাথার স্ক্যান করানো হয়েছে। এই দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই পুলকারের চালককেই দায়ী করছেন। তাঁদের দাবি, অত্যন্ত গতিতে গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে স্কুল ছুটির পরে ওই পুলকারে চড়ে বাড়ি ফিরছিল ন’জন ছাত্রছাত্রী। হেভিরমোড় লাগোয়া একটি হনুমান মন্দির পার হওয়ার পরেই রাস্তার বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁ দিকে নেমে যায় পুলকারটি। রাস্তার পাশের আগাছায় ভরা ওই নীচু জায়গায় প্রায় কোমর-সমান জল জমে রয়েছে। দুর্ঘটনার পরেই চেঁচামেচি শুরু করে পড়ুয়ারা। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। অনেকে জল ভেঙে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির কাছে পৌঁছে উদ্ধারে নেমে পড়েন।

Advertisement

সেই সময় ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের একটি মোবাইল ভ্যান ছিল। পুলিশ কর্মীরাও উদ্ধারে হাত লাগান। খবর পেয়ে অন্য গাড়িতে আরও কিছু পুলিশ কর্মী এসে আহত পড়ুয়াদের নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রওনা দেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জলের মধ্যে লাল রঙের পুলকারটি পড়ে রয়েছে। আশপাশে লোকজনের ভিড়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, ‘‘এই রাস্তায় বহু গাড়ি যাতায়াত করে। তাই ছোট পড়ুয়াদের নিয়ে পুলকারগুলির কম গতিতেই যাতায়াত করা উচিত। কিন্তু এই পুলকারটি উল্টে তীব্র গতিতে ছুটছিল।’’ তাঁদের মতে, চালক গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ ওই জমিতে জল থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশ পুলকারটি আটক করেছে। চেষ্টা করেও চালক বা পুলকার মালিকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এ দিকে এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মধ্যে। ডিএভি স্কুলের অধ্যক্ষা মালা শর্মাকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলকারটি স্কুল কর্তৃপক্ষের নয়। ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরাই গাড়িটি ভাড়া করেছেন। দুর্ঘটনায় জখম ছাত্র সপ্তশ্ব বাঁকুড়া শহরের পাটপুরের বাসিন্দা। তার বাবা স্বরূপকুমার পাল ও মা সঙ্গীতাদেবী দু’জনেই শিক্ষক। সঙ্গীতাদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ কর্মীরাই ফোন করে দুর্ঘটনার খবর জানান। ঘটনাটি শুনেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে ছুটে আসি।’’ স্বরূপকুমারবাবুর কথায়, ‘‘পুলকারে করে ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। ভাগ্যিস ওই জায়গায় জল ছিল। শক্ত মাটিতে গাড়িটা আছড়ে পড়লে কী যে হতো, কে জানে! এই ঘটনার পরে তো পুলকারে ছেলেকে ছাড়তেই ভয় লাগছে।’’ ওই দম্পতির দাবি, ‘‘আরও দায়িত্বপূর্ণ ভাবে পুলকার চালানো উচিত। প্রশাসন এ নিয়ে নজরদারি চালালে ভাল হয়।’’

ঠিক কী ভাবে হয়েছিল দুর্ঘটনা? হাসপাতালের স্ক্যান সেন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে সপ্তশ্ব বলে, ‘‘আমি ড্রাইভার কাকুর পাশের সিটে বসেছিলাম। হঠাৎ কী যে হয়ে গেল জানি না, গাড়িটা রাস্তার পাশে জমিতে নেমে গেল। ড্রাইভার কাকুই আমাকে দরজা খুলে বের করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন