নাবালিকা বিয়ে রুখতে এ বার পাশে পুরোহিত, ডেকরেটরও

কারও বিয়ে ঠিক হলে প্রথমেই খবর পান এলাকার পুরোহিত, মৌলবী, ডেকরেটর,  কেটারার বা রাঁধুনিদের কেউ। নাবালিকা বিয়ে আটকাতে এ বার তাঁদেরই সাহায্য চাওয়ার কথা ভাবছে সিউড়ি ২ ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫১
Share:

কারও বিয়ে ঠিক হলে প্রথমেই খবর পান এলাকার পুরোহিত, মৌলবী, ডেকরেটর, কেটারার বা রাঁধুনিদের কেউ। নাবালিকা বিয়ে আটকাতে এ বার তাঁদেরই সাহায্য চাওয়ার কথা ভাবছে সিউড়ি ২ ব্লক প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এমন একটি সিদ্ধান্তের পিছনে দিন দু’য়েক আগে ব্লক এলাকায় এক নাবালিকার বিয়ে আটকানো ‘অনুঘটকের’ কাজ করছে। সে দিন নাবালিকার বিয়ে আটকাতে চাইল্ড লাইনের দুই প্রতিনিধি, পুলিশ, কেন্দুয়া পঞ্চায়েত প্রধান নারায়ণ বাগদির পাশাপাশি ছিলেন সিউড়ি ২ ব্লকের যুগ্ম বিডিও বিশ্বজিৎ দত্ত। তখনই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা প্রথম বিশ্বজিৎবাবুর মাথায় আসে। তাতে রাজি বিডিও শেখ আবদুল্লা।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই দিন?

Advertisement

প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া অঞ্চলে এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তার পরিবার— বৃহস্পতিবার জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ সেই খবর দেন চাইল্ড লাইনকে। তার পরেই সিউড়ি থানা, পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনকে খবর দেয় চাইল্ড লাইন। সকলে হাজির হন সিউড়ি পুর এলাকার একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়িতে। ২ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। প্রস্তুতি শেষ। সরকারি আধিকারিকেরা জানতে পারেন, ওই ছাত্রী পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতে চায়। কিন্তু কৃষিজীবী বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের চাপে বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে তাকে।

যুগ্ম বিডিও বলেন, ‘‘ওই কথা শোনার পরে খারাপ লাগে। ছাত্রীর পরিবারকে বোঝানো হয়, মেয়ে পড়তে চাইছে অথচ ১৮ বছরের আগে কেন আপনারা ওর বিয়ে দিচ্ছেন? আঠেরোর পরে পড়াশোনা করলে কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা পাবে মেয়ে। তার পরে বিয়ে দিলে রূপশ্রীর আরও ২৫ হাজার টাকাও পেতে পারেন।’’ তিনি জানান, প্রশাসনিক কর্তাদের কথা শুনে মেয়ের বিয়ে বাতিল করে একটি মুচলেকা দেয় পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ততক্ষণে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় যুগ্ম বিডিও বাল্যবিবাহ কেন অপরাধ, তা নিয়ে একটি সচেতনতার পাঠ দেন। তিনি বলেন, ‘নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যাঁরা এ কথা জেনেও তেমন বিয়ের সঙ্গে থাকেন যেমন পুরোহিত, ডেকরেটর, কেটারার বা রাঁধুনি— এমনকী যাঁরা নিমন্ত্রণে আসছেন, তাঁরাও সমান অপরাধী। ছাড় পাওয়ার কথা নয় তাঁদেরও।’

যুগ্ম বিডিও জানান, ওই সময়ই নাবালিকা বিয়ে রুখতে পুরোহিত, মৌলভী, রাঁধুনি, ডেকরেটর মালিকদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে। কারণ তাঁরাই সকলের আগে কারও বিয়ের খবর পান।

নাবালিকা বিয়ে আটকানো এ জেলায় নতুন নয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এ বছরে শতাধিক বিয়ে আটকেছে চাইল্ড লাইন। শুক্রবার রাতে মহম্মদবাজার থানা এলাকায় আরও এক নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে। মেয়েটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। তবে চাইল্ড লাইনের বক্তব্য, এত প্রচারের পরেও সব নাবালিকার বিয়ের খবর আসে না। তা-ই এমন খবর পাওয়ার ক্ষেত্রে সিউড়ি ২ ব্লক প্রশাসনের নতুন ভাবনার প্রশংসা করেছে চাইল্ড লাইন।

ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের বৈঠকে বলা হবে, বিয়ের বায়না এলেই প্রথমেই মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র (আধার, বার্থ সার্টিফিকেট বা ভোটার কার্ড) দেখতে চাইতে হবে। অন্যরকম বা সন্দেহজনক কিছু দেখলেই যোগাযোগ করতে হবে প্রশসনের সঙ্গে। কেউ সব জেনেও চুপ থেকেছেন, পরে তেমন প্রমাণ পেলে ছাড় পাবেন না তিনিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন