Less rainfall

ভরা বর্ষাতেও জলের জন্য হা-পিত্যেশ

কৃষি দফতর জানাচ্ছে, আষাঢ় কেটেছে প্রায় বৃষ্টিহীন। শ্রাবণের প্রথমেও জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৬৩ শতাংশ।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৩
Share:

জলের অভাবে ধানচাষ শুরু হয়নি। ছবি: সঙ্গীত নাগ।

বছরে জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ১৩২১.৮ মিলিমিটার। তবুও ধান চাষে জলের অভাবে হা-পিত্যেশ করছেন পুরুলিয়ার চাষিরা। কারণ, বৃষ্টির জল নদী-নালা বেয়ে গড়িয়ে যায়। জল ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকলে এই দুর্ভোগ থাকত না, দাবি চাষিদের। সেচ ব্যবস্থা কেন গড়ে ওঠেনি, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতারা।

Advertisement

তবে জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) সুশান্ত দত্তের আশ্বাস, ‘‘এখন অগস্টের মাঝামাঝির বদলে মাসের শেষ পর্যন্ত চারা রোপণের সময় ধরা হয়। তাই ধান চারা রোপণের সময় এখনও পেরিয়ে যায়নি।’’

গত বছর থেকেই বৃষ্টির ঘাটতিতে ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষ। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, আষাঢ় কেটেছে প্রায় বৃষ্টিহীন। শ্রাবণের প্রথমেও জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৬৩ শতাংশ। এখন বিক্ষিপ্ত ভাবে জেলায় বৃষ্টি হলেও চারা রোপণের জন্য যেমনটা টানা ও ভারী বৃষ্টির প্রয়োজন, তা নেই। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ বার জেলার সর্বত্র সমান বৃষ্টি হচ্ছে না। ঝালদা মহকুমা বৃষ্টি কিছুটা পেলেও বাকি এলাকায় ঘাটতি অনেকটাই। বৃষ্টির অভাবে আমন চাষ সব থেকে বেশি ব্যাহত হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া, কাশীপুর, রঘুনাথপুর ১, মানবাজার ১ ও ২ ব্লক।

Advertisement

এ দিকে ধান চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগে চাষিরা। নিতুড়িয়ার লালপুরের নীলেশ্বর মণ্ডল ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘জুনের শেষেই বীজতলা হয়েছে। তার ২১-২৫ দিনের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে চারা রোপণ করতেই পারছি না। চারার বয়স অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ওই চারা শেষে রোপণ করা গেলেও কেমন ফলন দেবে চিন্তায় রয়েছি।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকের মেট্যালসহর গ্রামের মইন আনসারি জানান, নিচু জমির কিছুটা অংশে চারা রোপণ করা গেলেও বাকি জমির প্রায় সবটাই পড়ে রয়েছে।

কৃষি দফতর জানাচ্ছে, পুরুলিয়া জেলায় বহাল অর্থাৎ নিচু জমি কম। সবটাই উঁচু বাইদ বা কানালি জমি। বৃষ্টির ঘাটতিতে বাইদ জমিতে চারা রোপণ শুরুই করতে পারেননি চাষিরা।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষতি মেটাতে চাষিদের বাংলার শস্যবিমায় আবেদনে জোর দিচ্ছে কৃষি দফতর। তবে কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের জেলা সম্পাদক সোমনাথ কৈবর্ত্যের প্রশ্ন, ‘‘চাষ করতে না পারার পুরো ক্ষতি কি বিমার টাকায় পূরণ হয়? জেলাকে খরা ঘোষণা করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনেও আমন চাষ নিশ্চিত করতে বেশিরভাগ জমিকেই সেচের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের পদক্ষেপ কোথায়?’’

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ছোট জোড়ে বাঁধ দিয়ে, চেকড্যাম করে, জলতীর্থ তৈরি করে পুরুলিয়ায় সেচ-সেবিত জমির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ জমিকে সেচের আওতায় আনতে হলে কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর, সুবর্ণরেখা, শিলাবতী নদীগুলিতে বাঁধ দিতে হবে। তা রাজ্য সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে কোনও সাহায্যই পাওয়া যাচ্ছে না।’’

বিজেপির পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বিভাগের সংযোজক বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, ‘‘কেন্দ্র কখনওই কৃষি উন্নয়নে টাকা আটকায়নি। রাজ্যই বরং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেয়নি।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকার শুধু চেকড্যাম তৈরি জোর দিচ্ছে। কিন্তু এই জেলায় ভারী বৃষ্টিতে জলের চাপে বহু চেকড্যামই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কংগ্রেস আমলে জেলায় ছোট-বড় যে জলাধারগুলি তৈরি হয়েছিল, এখন সেখান থেকেই চাষিরা জল পাচ্ছেন।’’

তথ্য সহায়তা: প্রশান্ত পাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন