ঝুঁকি নিচ্ছে না রেল, সেতু খুলতে জুন

কেউ বলছেন, ‘নকশায় গোল!’ কেউ বলছেন, ‘সেতু মাপে কম পড়িয়াছে!’ বার বার সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়াও লালপুল নিয়ে জোর গুজব ছড়িয়েছে বোলপুরে। রেলের একটি মহল অবশ্য জানাচ্ছে, কলকাতার উড়ালপুল দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে, লালপুল সম্প্রসারণে ঝুঁকি নিতে চাইছে না রেল দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

কাজ শেষ হবে কবে? বোলপুরে চলছে লালপুল তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র

কেউ বলছেন, ‘নকশায় গোল!’ কেউ বলছেন, ‘সেতু মাপে কম পড়িয়াছে!’

Advertisement

বার বার সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়াও লালপুল নিয়ে জোর গুজব ছড়িয়েছে বোলপুরে। রেলের একটি মহল অবশ্য জানাচ্ছে, কলকাতার উড়ালপুল দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে, লালপুল সম্প্রসারণে ঝুঁকি নিতে চাইছে না রেল দফতর। সেই কারণেই উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেলেও বিশেষজ্ঞরা আর একবার যাচাই করে নিতে চাইছেন। ফলে চলতি বছর পয়লা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার কথা থাকলেও, কাজ থমকে। শেষ হয়নি সেতু সম্প্রসারণের কাজ। স্বাভাবিক কারণেই, ভোগান্তি এবং দুর্ভোগ চরমে এলাকার বাসিন্দাদের। অবিলম্বে সঠিক পদ্ধতি মেনে কাজ দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি উঠছে এলাকায়। রেল দফতরের আশ্বাস, ‘‘জুনের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হবে লালপুল।’’

পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপর বোলপুর আর প্রান্তিক স্টেশনের মাঝে রয়েছে সঙ্কীর্ণ রেলসেতু লালপুল। ওই সেতু সম্প্রসারণের জন্য এলাকার বাসিন্দা, বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে এলাকার নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা কয়েক দশক ধরে নানা আবেদন নিবেদন এবং তদ্বির করেছেন সংশ্লিষ্ট সব মহলে। অবশেষে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দু’তারিখ আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু করে রেল দফতর। রেল দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী দুটি লেনের রোড ওভারব্রিজ বোলপুর এবং প্রান্তিক স্টেশনের মাঝে হওয়ার কথা। আনুমানিক ৮ কোটি ৩ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই সেতু সম্প্রসারণের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছর পয়লা জানুয়ারি। কিন্তু কখনও ভারি বৃষ্টির জন্য আবার কখন যন্ত্রাংশ অন্য জায়গায় জলের মধ্যে আটকা পড়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই সেতুর কাজ শেষ হয়নি। পরে অবশ্য রেল দফতর থেকে জানানো হয়, চলতি বছর মার্চ মাসের ২০ তারিখ ওই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে।

Advertisement

কিন্তু সেই মেয়াদের মধ্যেও কাজ সম্ভব হয়নি।

শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসব এবং বসন্ত উৎসবে দেশ বিদেশের প্রচুর মানুষ আসেন। তাছাড়াও বছর ভর দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় থাকে শহরে। আশেপাশের তিন জেলায় যাওয়ার জন্য নানা যানবাহন ওই সঙ্কীর্ণ রেল সেতুর উপর নির্ভরশীল। বোলপুর, শান্তিনিকেতন এবং আশপাশের জেলায় যোগাযোগের জন্য অন্যতম লাইফলাইন এই লালপুল। এমন ব্যস্ততম সেতুর তৈরির কাজে দেরি হওয়ায়, স্বাভাবিক কারণে ক্ষোভ বাড়ছে সংশ্লিষ্ট সব মহলে। রেল লাইনের এ পারের মানুষজন ওপারে যেতে হলে কাউকে কাউকে কম করে দু’ কিলোমিটারের কিছু বেশি রাস্তা পার হতে হচ্ছে।

রেল লাইনের ওপারের বাসিন্দা তথা বোলপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড মকরমপুররের বাসিন্দা নিলাদ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একের পর এক দিন ধার্য হচ্ছে। আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। নানা কথা কান পাতলেই শোনা যায়। কেন্দ্র সরকারের রেলের বিষয়, আশা করেছিলাম দ্রুত শেষ হবে। কিন্তু হল কই? অথচ শ্যামবাটী সেচ ক্যানাল রাজ্যসরকারের হলেও, দ্রুত শেষ হল!’’ একই ভাবে অহেতুক দেরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া মোনালিসা মণ্ডল। মোনালিসা ও তাঁর পরিবার বলেন, ‘‘পঠন পাঠন থেকে শুরু করে হাটবাজার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দমকল-জরুরি পরিষেবার জন্য নির্ভর করতে হয়। কিন্তু লালপুল কবে শেষ হবে! ফলে হেনস্থা আর ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ এই শহরের বাড়ি তৈরির কাজে নির্ভর করে নিজের পাঁচ সদস্যের পরিবার চালান স্থানীয় সিয়ানের বাসিন্দা মনসুর আলি। তিনি বলেন, ‘‘কখন বাসে আবার কখন নিজের সাইকেলে আসা যাওয়া করি। লালপুল সম্প্রসারণ না হওয়ায় ভিন্ন রাস্তায় যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’

সেতু সম্প্রসারণের কাজের সুপারভাইজার পবন মিশ্র এবং ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সেন বলেন, ‘‘সেতুর কাজ জোর কদমে চলছে। যাত্রী নিরাপত্তা এবং ওই সেতু সম্প্রসারণের কাজে যাতে কোনও রকমের ত্রুটি বিচ্যুতি না থাকে তার জন্য রেল দফতর সতর্ক ও প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকটা কাজ এগিয়ে গিয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে, দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে।’’

কবে খুলছে সেতু?

তাঁরা বলেন, ‘‘আশা করছি, জুন মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে এই সেতু ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন