দিশমের ডাকা ভারত বন্ধে দুই জেলায় ভোগান্তি দিনভর

কোথাও ৪, কোথাও ৮ ঘণ্টা থমকে

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হল আদ্রা ডিভিশনে। জরুরি কাজে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেন না অনেকে। চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনো হল না রোগীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

সুনসান: থমকে রয়েছে ট্রেন। ফাঁকা পুরুলিয়া স্টেশন। সোমবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেল অপেক্ষায়। কোথাও টানা ৬ ঘণ্টা, কোথাও ৮ ঘণ্টা রেল অবরোধের জেরে ভোগান্তির একশেষ হল যাত্রীদের। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হল আদ্রা ডিভিশনে। জরুরি কাজে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেন না অনেকে। চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনো হল না রোগীর। অবরোধ তুলতে আরপিএফ ও জিআরপির কর্মীদের পাঠানো হয়েছিল বটে, তবে লাভ হয়নি। আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিন রেল অবরোধ করার অভিযোগে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির পনেরো জন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

Advertisement

সোমবার সারনা ধর্মের স্বীকৃতি-সহ দশ দফা দাবিতে ভারত বন্‌ধ ডেকেছিল ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি ও আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান। মধুকুণ্ডা স্টেশনে অবরোধের নেতৃত্বে ছিলেন ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির রাজ্য সভানেত্রী পানমনি বেসরা। তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসীদের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে বঞ্চনার প্রতিবাদে ডাকা ভারত বন্‌ধে রেল অবরোধ হয়েছে।” পানমনি জানান, দেশের আরও পাঁচটি রাজ্যে রেল অবরোধ হয়েছে।

এ দিন অবরোধ হয়েছে মূলত ডিভিশনের তিনটি জায়গায়। সকাল ৬টা থেকে আদ্রা-আসানসোল শাখার মধুকুণ্ডা, আদ্রা-মেদিনীপুর শাখার ইন্দ্রবিল ও আদ্রা-চান্ডিল শাখার কাঁটাডি স্টেশনে দুই দলের কর্মী সমর্থকেরা ধামসা আর মাদল নিয়ে বসে পড়েছিলেন। মধুকণ্ডায় অবরোধ উঠেছে বেলা ১২টায়। ইন্দ্রবিলে পৌনে ১টায়। কাঁটাডি স্টেশনে অবরোধ উঠতে উঠতে আড়াইটে বেজে যায়।

Advertisement

আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, টানা অবরোধে ডিভিশনে রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বাতিল করতে হয়েছে দশটি লোকাল ট্রেন। ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব রেলের সদর দফতরের নির্দেশ মতো ওই দশটি ট্রেন আজ, মঙ্গলবারও বন্ধ থাকছে। রেলের দাবি, অবরোধের জেরে বিভিন্ন শাখায় ট্রেনের ‘লিঙ্ক’-এ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় এটা করতে হচ্ছে।

সোমবার আদ্রা আসানসোল শাখায় চলা তিনটি প্যাসেঞ্জার-সহ বাতিল হয়েছে আসানসোল-রাঁচী প্যাসেঞ্জার, আসানসোল-বোকারো প্যাসেঞ্জার, আসানসোল-টাটানগর প্যাসেঞ্জার, আদ্রা-মেদিনীপুর প্যাসেঞ্জার, খড়গপুর হাটিয়া প্যাসেঞ্জার ও টাটা-দানাপুর এক্সপ্রেস। যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয় দিল্লি-ভূবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ চারটি দূরপাল্লার ট্রেনের। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয় সাতটি ট্রেনের।

অবরোধের জেরে সকাল থেকে ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েছিল পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস, আসানসোল-হলদিয়া এক্সপ্রেস, দূর্গ-সাউথ বিহার এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়কটি দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন। পুরুলিয়া থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে পুরুলিয়া-ভেল্লিপুরম এক্সপ্রেস।

এ দিন আটকে পড়া অনেক যাত্রীই দাবি করেছেন, অবরোধের কথা তাঁরা আগাম জানতেন না। সেই হিসাবেই বেরিয়েছিলেন। রঘুনাথপুরের শাঁকার বাসিন্দা চিকিৎসক চিন্ময় নন্দীর স্বাস্থ্য ভবনে কর্মরত। সকালে আদ্রা থেকে পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত ট্রেন না ছাড়ায় বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। চিন্ময় বলেন, ‘‘রবিবারের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছতে হতো। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। সে সব আর হল না।’’ চিকিৎসার ভেল্লিপুরম এক্সপ্রেসে ভেলোরে যাচ্ছিলেন পুরুলিয়ার অসিত মুদি। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সকালেই ডাক্তার দেখানোর কথা। ট্রেন ধরতে এসে শুনি অবরোধ চলছে। ট্রেন কখন ছাড়বে সেটা কেউ বলতে পারেছ না।”

গরমে পথে আটকে পড়ে ভোগান্তি হয়েছে বাঁকুড়াতেও। অবরোধের জেরে বাঁকুড়া স্টেশনে খড়্গপুর থেকে আসানসোল যাওয়ার প্যাসেঞ্জার ট্রেন ও বিষ্ণুপুর থেকে ধানবাদ যাওয়ার লোকাল ট্রেন আটকে পড়ে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ বিষ্ণুপুর-ধানবাদ ট্রেনটি বাতিল করেন রেল কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পরে অবরোধ উঠতে উঠতে বেজে গিয়েছিল দুপুর সওয়া ১টা। আদ্রার উদ্দেশে রওনা দেয় খড়্গপুর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার।

যাত্রীদের অসুবিধা হবে জেনেও তাঁদের দাবির প্রতি সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হয়েই রেল অবরোধ করতে হয়েছে বলে এ দিন দাবি করেছেন দুই দলের নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন