রাঙামাটির কড়চা

শান্তিনিকেতন আশ্রমের প্রথম যুগের আলপনার ইতিহাসে যাঁদের নাম এসে পড়ে, তাঁদের একজন আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের স্ত্রী কিরনবালা দেবী। গ্রাম বাংলার আলপনা তাঁর হাত ধরেই এই আশ্রমে প্রবেশ করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

আশ্রমে আলপনা

Advertisement

শান্তিনিকেতন আশ্রমের প্রথম যুগের আলপনার ইতিহাসে যাঁদের নাম এসে পড়ে, তাঁদের একজন আচার্য ক্ষিতিমোহন সেনের স্ত্রী কিরনবালা দেবী। গ্রাম বাংলার আলপনা তাঁর হাত ধরেই এই আশ্রমে প্রবেশ করে। ১৯২৪ সালে আশ্রমে আলপনার জন্য রবীন্দ্রনাথ আনেন সুকুমারী দেবীকে। পরবর্তী কালে শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতনের সৌন্দর্য রক্ষার গুরু দায়িত্ব যাঁর হাতে ছিল, তিনি নন্দলাল বসু। তাঁর উদ্যোগে আশ্রমে শুরু হয় আলপনার নব্য এক যুগ। আধুনিক সময়ে সেই ধারাটিকে চিনতে, শান্তিনিকেতনী আলপনার একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কলাভবন। ‘শান্তিনিকেতনের আলপনা, অতীত এবং বর্তমান’ শীর্ষক ওই প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে নন্দন আর্ট গ্যালারিতে। কলাভবনের কিউরেটর সুশোভন অধিকারী বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ আশ্রমে এই প্রথম। তাতে সেই সময়কার গ্রাম বাংলার আলপনার ধারা আশ্রমে কেমন করে এসেছে জানা যাবে। ঠিক তেমনই কালক্রমে শিল্পটির নিজস্বতা গড়ে ওঠার বিষয়টিও জানা যাবে।’’ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে কলাভবনের সংগ্রহে থাকা বিশিষ্টদের আলপনা, আলোকচিত্র, স্কেচের কপি। কিরনবালা সেন, সুকুমারী দেবী, নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, যমুনা সেনদের পাশাপাশি শিশির ঘোষ, ক্ষমা ঘোষ, ননী গোপাল ঘোষ এবং বর্তমানের সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের কাজ থাকছে ওই প্রদর্শনীতে। বিশেষ ভাবে প্রদর্শীত হচ্ছে শিক্ষাসত্রের চিত্রকলার অধ্যাপক সুধীরঞ্জনবাবুর কাজ। তিনি নতুন করে আশ্রমের আলপনার ধারাটিকে নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর নকশায় ফুল, লতা, পাতার সঙ্গে কবির গানও জায়গা করে নিয়েছে।

Advertisement

সাহিত্য মন্দির

নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে পুরুলিয়া হরিপদ সাহিত্য মন্দিরের নিজস্ব বার্ষিক পত্রিকা সাহিত্য মন্দির। গত পয়লা বৈশাখ সাহিত্য মন্দির হলে এক অনুষ্ঠানে পত্রিকার একবিংশতম সংখ্যাটি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশকদের পক্ষে দিলীপ কুমার গোস্বামী জানিয়েছেন, ১৯২১ সালে জেলা শহরে এই সাহিত্য মন্দির স্থাপিত হলেও পত্রিকা প্রকাশ তার অনেক পরে। ১৯৮২ তে প্রথম এই পত্রিকা প্রকাশ হয়। জেলার তথা বিস্তীর্ণ মানভূম সহ রাঢ়বঙ্গের নানা বিষয়ের উপর প্রবন্ধগুলিই এই পত্রিকার আকর্ষণ। অতীতে অশোক চৌধুরী, অনিল চৌধুরী, চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত, অরুনচন্দ্র ঘোষের মতো বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকেরা লিখেছেন। জেলার প্রয়াত সাংবাদিক অসিত বসু বিভিন্ন বিষয় সম্বলিত এই পত্রিকাকে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। একবিংশতম সংখ্যাটিও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিমলকান্তি ভট্টাচাযের ‘মহাভারতের দ্রৌপদী ছিলেন বাঙালি কন্যা’, দিলীপ কুমার গোস্বামীর ‘মানভূমের স্বাধীনতা আন্দোলন’, জলধর কর্মকারের ‘আদিবাসী লোকসংস্কৃতি’, সুভাষচন্দ্র মোদকের ‘ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ঝুমুর ও তার সাহিত্যমান’ এবং হরিপদ দাঁকে নিয়ে লেখা অসিতবরণ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা-সহ বেশ কয়েকটি গল্প স্থান পেয়েছে এ বারের সংখ্যায়। চলতি বছরে কবিতায় প্রদীপ সিংহ, গল্পে স্বাতী গুহ ও প্রহন্ধে সুনীল মাহাতোকে সাহিত্য মন্দির পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

মাসের নাটক

শতবর্ষের প্রাচীন নাট্য-ঐতিহ্যের স্মরণে বীরভূমের লাভপুরে অতুলশিব মঞ্চে শুরু হল প্রতিমাসের নাটক। উদ্যোক্তা বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী। রবিবার তারই সূচনা পর্বে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রথমটি ছিল সিউড়ির আত্মজ’র নিবেদন ‘ন হন্যতে’। এবং দ্বিতীয়টি সংস্কৃতি বাহিনীর ‘বোগলো বায়েন’। এ নাটকটি রাঢ় বাংলার ঢাকিদের জীবন ও যাপন নিয়ে লেখা। লোক গানের অনুসঙ্গে, লোক সুর আর কথায় নাটকটি লিখেছেন সংস্কৃতি বাহিনীর উজ্বল মুখোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশনাতেই নাটকটির ৫৭তম অভিনয় হল প্রতিমাসের নাটকে।

বই-পড়া

স্কুল ভাল লাগে না। খিড়কি দুয়ার দিয়ে ঘরে ফিরে তাই ‘নিজের বই’ পড়ছেন তিনি। তিনি বিষ্ণু দে। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উজ্জ্বল ছাত্রর ঝোঁক মার্কসীয় অর্থনীতিতে —‘পাগলা ঘোড়া’ বাদল সরকার তো এমনই ছিলেন। উনিশ ও বিশ শতকের বিশিষ্ট লেখক, চিন্তাবিদদের নিজস্ব ‘বই-ঘরে’র একটা ছবি আঁকতে চাইল ‘কোরক’ পত্রিকার ‘বাংলা বই ও বই পড়া’ সংখ্যাটি। সম্পাদক তাপস ভৌমিক ৩টি পর্বে সংখ্যাটি সাজিয়েছেন। প্রথম পর্বে মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মুজফ্‌ফর আহমেদের মতো ২৩ জন বাঙালির পাঠক মনের খোঁজ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আল মাহমুদ, রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীরা তাঁদের প্রিয় বইগুলির কথা লিখেছেন। তৃতীয় পর্বে সম্পাদক চেষ্টা করেছেন অবাঙালিদের বাংলা সাহিত্য-চর্চার একটা ধারণা দিতে। সংখ্যাটি বাঙালির বই চর্চার ঐতিহ্যকে এক সুতোয় গাঁথতে চেয়েছে।

পুরা চর্চা

বাঙালির ঘরের সম্পদ ‘লেটো’ গান অস্তিত্ব রক্ষায় সময়ের কী ভাবে যুঝছে, মেদিনীপুরের সরবেড়িয়ার সত্যনারায়ণ মন্দিরটিকে ঘিরে কী কী বিতর্ক রয়েছে-এমনই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেজে উঠেছে ‘পুরলোকবার্তা’র সাম্প্রতিক সংখ্যাটি। মোট ১২টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত দুর্গাপুরের গোপালমাঠ থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকা। ক্ষেত্র সমীক্ষার ভিতে দাঁড়িয়ে লেখা হয়েছে কয়েকটি আলোচনা। চন্দ্রকেতুগড়, পশ্চিম ক্ষত্রপ রাজাদের বিনিময় ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিজনবিহারী ভট্টাচার্যের বানান-ভাবনা, বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার পুরাকীর্তি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডাং পুতুল-সহ মোট ৪২টি মননশীল আলোচনাকে পত্রিকায় জায়গা দিয়েছেন সম্পাদক সোমনাথ রায়। বৌদ্ধ যুগে নারীদের অবস্থা, তাও জানা যায় পত্রিকা থেকে।

ব্যাটসম্যান

চলে গেলেন শম্ভু চট্টোপাধ্যায়। সুভাষ এসি-তে খেলতে খেলতেই ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চলে। পরে কলকাতায় প্রথম ডিভিশনেও চুটিয়ে খেলেছেন। জন্ম বার্নপুরে। খেলেছেন বার্নপুর ক্রিকেট ক্লাব (বিসিসি), সুভাষ এসি-র হয়েও। অবসর জীবনের পরেও ঘরে বসে থাকতে দেখা যায়নি ইস্কো কারখানার কর্মী শম্ভুবাবুকে। সামলেছেন বিসিসি-র টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব। ছিলেন সিএবি-র সাব কমিটির সদস্যও। শুক্রবার ৬১ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বার্নপুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় শম্ভুবাবুর। তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই জেলার ক্রীড়া জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া।

কালি কাগজ কলেন্দ্র

শুরুটা করেছিলেন সেই আশির দশকের একেবারে প্রথম দিকে। জঙ্গলমহলের বান্দোয়ানের প্রত্যন্ত শিরীষগোড়া গ্রাম থেকে সেই চলা এখনও অবিরাম। সাঁওতালি ভাষা ও সংস্কৃতির রস পাঠকদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখেই তাঁর পথচলা। তিনি কলেন্দ্রনাথ মান্ডি। বাবা কোনওরকমে প্রাথমিক স্কুলের চৌকাঠ পেরিয়েছেন। কলেন্দ্র অবশ্য গ্রামের ইস্কুলের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে। কলেজে পড়াশোনার সময়ই প্রেমে পড়লেন কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কুর। কলেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘মানবাজার-২ ব্লকের দাঁড়িকাডোবা গ্রামের বাসিন্দা কবি সারদাপ্রসাদ তখন যুবকদের চোখের মণি। ৭৯তে কলেজ থেকে বেরিয়ে জড়িয়ে পড়লাম কবির সঙ্গে কাজকর্মে। তখনই মনে হল একটা কাগজ বের করতে হবে।’’ তখন সারদাপ্রসাদ নিজে একটি কাগজ সম্পাদনা করতেন। নাম ‘সুসার ডাহার।’ ৮১ সালে কলেন্দ্রনাথ নিজেই সম্পাদনা শুরু করলেন ‘সিলি’ নামের একটি কাগজ। তাঁর কথায়, ‘‘কবি সরদাপ্রসাদের সংস্পর্শে এসেই বলতে পারেন কাগজটা শুরু করে করেছিলাম। টানা পঁয়ত্রিশ বছর ধরে চালাচ্ছি। প্রথমে ত্রৈমাসিক, পরে দ্বিমাসিক।’’ সম্পাদকের কথায়, তাঁর এই কাগজ থেকে অনেকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এটাই তাঁর প্রাপ্তি। নাম করতে গিয়ে বললেন, ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের বাসিন্দা যদুমণি বেসরা, বর্ধমানের বাদল হেমব্রম, সতীনাথ মুর্মুর মতো লেখকদের কথা। নিজে সংবর্ধনা পেয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকেও।

ছবিঘর

লাভপুরে সংস্কৃতি বাহিনীর নাটক ‘বোগলো বায়েন’। —নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন