শরতে ‘অকাল রথ’ তপোবনে

দশমীতে গ্রামে বসে আট দিনের মেলা। প্রায় দু’শো বছর ধরে হয়ে আসছে এমনটাই। শনিবার ছিল এ বারের মেলার শেষ দিন।

Advertisement

অভিজিৎ সিংহ

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০২
Share:

বিকিকিনি: ওন্দার মেলায়। নিজস্ব চিত্র

দশমীর পরে অনেকেরই মুখ ভার। ওন্দার তপোবন গ্রামের বাসিন্দাদের নয়। পুজোর আনন্দ ফুরোতে সেখানে বাকি থাকে আরও এক সপ্তাহ। দশমীতে গ্রামে বসে আট দিনের মেলা। প্রায় দু’শো বছর ধরে হয়ে আসছে এমনটাই। শনিবার ছিল এ বারের মেলার শেষ দিন।

Advertisement

গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে রামচন্দ্রের একচূড়ার মন্দির। সেখানকার পূজারী বিপত্তারণ চক্রবর্তী জানান, যুদ্ধে রাবণকে পরাজিত করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন রামচন্দ্র। দশমীতে তাই ওই মন্দির থেকে বেরোয় ‘অকাল রথ’। তপোবনে আষাঢ় মাসে রথযাত্রা হয় না। হয় দুর্গাপুজোর পরে। তাতে চড়ে আট দিন ধরে রাম, সীতা এবং মহাবীর হনুমানের বিগ্রহ নিয়ে একটু একটু করে মন্দির থেকে গ্রামে পৌঁছনো হয়।

সেখানেই চলে বিরাট মেলা। জিলিপি, পাঁপর, গেরস্থালির হরেক জিনিসপত্র— সব নিয়ে জমজমাট। ভিড় করেন আশপাশের শানতোড়, নতুনগ্রাম, হরিহরপুরের মতো প্রায় কুড়িটি গ্রামের বাসিন্দারা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে হীরেন পাত্র বলেন, ‘‘আষাঢ়ের রথের আনন্দ আমরা শরতেই সুদে আসলে উসুল করে নিই।’’ ঘরে ফেরেন প্রবাসীরা। মেলার টানে ঘর ভরে ওঠে আত্মীয়স্বজনে। মেলার জন্য শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন গোয়ালডাঙার বাসিন্দা অমিত পাল। তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে নিয়ে মেলায় আসা, ফুচকা আর জিলিপি খাওয়া, এ সবের মজাটাই আলাদা। মেলার জিলিপি আর মিষ্টির দোকানের জিলিপি কি এক হল?’’ গ্রামের মেয়ে পায়েল ঘোষ, বিউটি পাল বলেন, ‘‘মা দুর্গা বাপের বাড়ি থেকে ফিরে যান দশমীতে। মেলার জন্য আমাদের অবশ্য আরও ক’টা দিন বাপের বাড়িতে থাকা হয়ে যায়।’’

Advertisement

এখনকার রথটি প্রায় ১৮ ফুট লম্বা, পিতলের তৈরি। বিপত্তারণবাবু বলেন,, ‘‘প্রায় নব্বই বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ বৈকুণ্ঠ চক্রবর্তী এই রথ তৈরি করিয়েছিলেন। তার আগে প্রতি বছর তৈরি হতো নিম কাঠের নতুন রথ।’’ জনশ্রুতি রয়েছে, দু’কূল ছাপানো শ্রাবণের দারকেশ্বরে ভেসে আসত মস্ত নিম কাঠের গুঁড়ি। বিষ্ণুপুরের সূত্রধরেরা তা দিয়ে তৈরি করতেন রথ। উৎসবের শেষে দারকেশ্বরে বিসর্জন দেওয়া হতো। এই পদ্ধতিতে খরচ হতো বিস্তর। মস্ত বড় রথ বিসর্জন দিতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটত। সেই সমস্ত দেখেশুনে তৈরি করা হয় পিতলের রথ। মন্দির নিয়ে রয়েছে আরও জনশ্রুতি। তেমনই একটি শোনালেন চক্রবর্তী বংশের মধুসূদন চক্রবর্তী— এক বার বন্যায় বাসিন্দাদের কাতর প্রার্থনায় মহাবীর নদীতে বাঁধ দিয়েছিলেন। সেই ইস্তক গ্রামটির নাম হয় বাঁধভাঙা।

এই সমস্ত কথা শ্রুতিতে ভেসে প্রজন্মের মধ্যে বয়ে চলে। আর তার ভিতটা পোক্ত করে উৎসব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন