মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে সোজারথের থেকে উল্টোরথেই জৌলুস বেশি। সঙ্গে দুই রথ কমিটির রেষারেষিও। কিন্তু সোজারথের দিনই উপছে পড়ল জনজোয়ার। সেই সঙ্গে একসপ্তাহের জন্য দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা— কৃষ্ণগঞ্জের আট পাড়া বনাম মাধবগঞ্জের এগারো পাড়া।
দীর্ঘ দিন ধরে ওই দুই রথ কমিটির উল্টোরথের দিনে শোভাযাত্রার দ্বৈরথ নিয়ে মাতামাতি চলছে। কে কাকে আলো, বাজনায়, বাহারে কতটা টেক্কা দিতে পারে তা নিয়েই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের লড়াই। আর সেই আনন্দেই মেতে থাকেন বাসিন্দারা। তাই রথের দিন থেকেই এই শহরে উল্টোরথের লড়াইয়ের ‘কাউন্ট ডাউন’ শুরু হয়ে যায়। আগামী শনিবার হবে বকুলকুঞ্জ। নাটমন্দিরে চলবে ভক্তিগীতি। মঞ্চ বেঁধে হবে বিচিত্রানুষ্ঠান। কিন্তু একসপ্তাহ আগে রথের দিন থেকেই শহরে দুই এলাকায় শুধু মাথার ছয়লাপ।
বিষ্ণুপুরের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, সপ্তদশ শতকে মল্লরাজা বীরসিংহদেব পাথরের রথ বানিয়ে বিষ্ণুপুরে শুরু করেছিলেন রথযাত্রার। পরবর্তীকালে পিতলের রথ বানিয়ে তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে মল্লরাজধানীর এই দু’টি এলাকায়। দুই রথ কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার উল্টোরথের শোভাযাত্রার ‘রুট-চার্ট’ তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুরসভা সেই সব রাস্তা পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। কৃষ্ণগঞ্জ আট পাড়া রথযাত্রা কমিটির সভাপতি তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিলোচন দে বলেন, “শোভাযাত্রায় এ বার থাকছে চন্দননগরের আলো, কলকাতার তাসা, ব্যান্ড, লাগড়া কীর্তন-সহ অনেকগুলি বাজনার দল। ছ’টি চৌদল।” কম যাচ্ছে না মাধবগঞ্জ এগারো পাড়াও। ওই রথযাত্রা কমিটির সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, “আমরা আলো, বাজনা ও শোভাযাত্রার চৌদল সাজানোয় এ বারও অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করছি। কলকাতা, রানিগঞ্জ, খড়গপুর থেকে আসছে বাজনার দল। শোভাযাত্রায় থাকবে ৬টি চৌদল। আশা করছি দর্শকদের ভাল লাগবে।’’ এর বাইরে বাজিমাত করার জন্য লুকনো তাসও থাকতে পারে দু’তরফেরই। উল্টোরথের দিনেই দেখা যাবে কার কেমন দৌড়।
ইতিমধ্যেই দুই রথ কমিটি, পুলিশ-প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠকে বসেছেন বিষ্ণুপুরের মহকুমা প্রশাসন। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কৃষ্ণগঞ্জের রথের রশিতে হাত লাগান এ দিন। তিনি জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এখানকার উল্টোরথের মেলায় বহু ভক্ত সমাগম হয়েছে। সে কারণে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।