মেলা: রথে তালপাতার সেপাই বিক্রি করছেন প্রশান্ত। নিজস্ব চিত্র
বছরভর ট্রলি ভ্যান চালিয়ে দিন গুজরান, শুধু রথের দিনে সেই পুরানো শৈশবে ফিরে যাওয়া।
সিউড়ির মালফটকের প্রশান্ত কোড়া। রথ উপলক্ষেই তিনি বানান প্রায় হারিয়ে যেতে বসা খেলনা— তাল পাতার সেপাই। শুধু বছরের এক দিন। বছর চল্লিশের খেটে প্রশান্ত বলেন, ‘‘কোন ছোটবেলায় রথের মেলায় এসে এই খেলনাটা মনে ধরে যায়। তারপর চেষ্টায় থাকি বানানোর। পাড়াতুতো এক দাদুর হাত ধরে শিখি। বাঁশের কাঠি, তাল পাতা, রঙিন কাগজে খুব যত্ন করে তৈরি হয় সেপাইয়ের শরীর, মাথাটা মাটির। সারদিন ভ্যান চালিয়ে অবসর মতন দেড়শো থেকে দুশো পিস মাল বানাই।”
ফি বছর রথের দিন বিকেল হলেই একদল ছেলে নিয়ে তালপাতার সেপাইয়ের পসরা হাতে সিউড়ির ইন্দিরাচকে দাড়িয়ে থাকেন প্রশান্ত। চার পাশে আধুনিক প্লাস্টিকের খেলনা বেলুনের ফেরিওয়ালাদের ভিড়। এক মাত্র তিনিই সাবেকি খেলনা নিয়ে হাজির। পাড়ার ছেলে দেবু, সাগর, সঞ্জীব, গৌতমদের হাতধরে প্রতিটি তালপাতার সেপাই বিকোয় দশ টাকায়। সিউড়ির সমন্বয় পল্লির বাসিন্দা শিক্ষিকা শিল্পী অধিকারী তালপাতার সেপাই কিনে ফিরে যান অতীতে। বলেন, ‘‘সেই কবে পুরানো দিনের রথের মেলায় তালপাতার সেপাই, ভেঁপু কিনতাম বড়দের সঙ্গে এসে। কী যে ভাল লাগত।”
রথে জেলা বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। নানা অনুষ্ঠানও হয়।
অন্য বারের মতো এ বারও মহা সমারোহে রথ অনুষ্ঠিত হল ময়ূরেশ্বরের কুন্ডলার রথযাত্রা। জমিদার বাড়ির রথযাত্রা হিসাবে খ্যাত শতাব্দী প্রাচীন ওই উৎসবে সামিল হন এলাকার ১০/১২ গ্রামের মানুষ। ১৬ ফুট উচ্চতার পিতলের রথের দড়ি টানার আর্কষণ বেড়েই চলেছে বলে পরিবারের দাবি। পরিবারের পক্ষে দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় জানান, সংস্কারের অভাবে ঐতিহ্যবাহী রথ এবং জগন্নাথের মন্দির আজ ধ্বংসের মুখে। সরকারি সহায়তা না পেলে অচিরেই এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি বন্ধ হয়ে যাবে।
ফি বছরের ন্যায় এ বারও বোলপুরের মকরমপুরের গৌড়ীয় মঠে প্রথা মেনে শুরু হল রথযাত্রা। রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথদেবের বিশেষ পুজোর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে, পুরীর রথযাত্রার আদলে শুরু হল সোমবার বিকেলে। হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। আবার একই ভাবে বোলপুরের কালী বারোয়ারী তলায়ও প্রাচীন রথযাত্রার সূচনা করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ। মকরমপুরের সপ্তর্ষি ক্লাবের রথ, হরগৌরী তলার জীবন মণ্ডলের রথ এবং দর্জিপাড়ার চন্দ্রবাড়ির রথ-সহ শহরের একাধিক রথে নিয়ম মেনে পূজার্চনা হয়েছে।
পুরীতে জগন্নাথদেবের রথ-সহ তিনটি রথ যেমন এলাকা ভ্রমণে বেরোয়, ঠিক একই কায়দায় বোলপুরেও একের পর এক রথ গোটা শহর পরিক্রমা করে।
নাম সংকীর্তন, পুজো, পাঠ এবং আরতি যথা নিয়মে হয়েছে সোমবার। রথযাত্রা দেখার জন্য শহরে হাজারো মানুষের ভিড়ের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকা থেকেও বহু মানুষজন হাজির ছিলেন চৌরাস্তায়। রথযাত্রায় যাতে কোনও রকমের বিশৃঙ্খলা না হয়, তার জন্য পুলিশ নজরদারি এবং শহরের মোড়ে মোড়ে কড়া পাহারা ছিল চোখে পড়ার মতো।