নবম শ্রেণির পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের মান্নোনয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে শুরু হয়েছে বিশেষ ক্লাস ‘রেমেডিয়াল টিচিং’। বীরভূমও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু যাদের কথা ভেবে এই ব্যবস্থা, তারা কতটা উপকৃত হচ্ছে— তা নিয়েই দ্বিধাবিভক্ত স্কুলশিক্ষকেরাই।
স্কুল সূত্রের খবর, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল প্রথা উঠে যাওয়ায় নবম শ্রেণিতে উঠে বেশ খানিকটা সমস্যায় পড়ে পড়ুয়াদের একাংশ। স্কুলশিক্ষকদের দাবি, পাশফেল না থাকার ফলে এমন অনেক পড়ুয়া নবম শ্রেণিতে ওঠে, যাদের সেই ভিতই তৈরি হয়নি। এই বিশেষ ক্লাস, সেই ফাঁক দূর করার লক্ষ্যেই। গত সেপ্টেম্বরে আসা নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে সব স্কুলের মাধ্যমিকের পাশের হার ৮০ শতাংশের নীচে এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০-রও বেশি, সেই সব স্কুলে বাংলা, ইংরেজি ও অঙ্কে সব চেয়ে দুর্বল ২৫ জন ছাত্রছাত্রীকে বেছে নিয়েই চালানো হচ্ছে বিশেষ ক্লাস। প্রতিটি বিষয়ে ১২টি করে ধরে কমপক্ষে ৩৬টি ক্লাস নেবেন স্কুলের শিক্ষকেরা। বরাদ্দ পড়ুয়া পিছু ৫০০ টাকা। ক্লাসগুলি করাতে হবে স্কুলের সময়ের আগে অথবা পড়ে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি মূল্যায়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির দুর্বল পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ ক্লাস শুরু হয়েছে বীরভূমে এমন ৬৯টি স্কুলকে বাছা হয়েছে।
ভাল উদ্যোগ বলে মেনে নিয়েও প্রকল্পটি নিয়ে আড়ালে নানা প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ। এমনিতেই এই অভিযান সূত্রে জানা গিয়েছে, যে মানদণ্ডে স্কুলগুলি বাছা হয়েছিল, সেই তালিকায় এই জেলায় মোট ১৩৩টি স্কুল ছিল। কিন্তু স্থায়ী পরিচালন সমিতি গঠিত না হওয়া এবং নির্দিষ্ট খাতের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় বাদ চলে গিয়েছে ৬৪টি স্কুল। এ দিকে, প্রশ্ন উঠছে, দুর্বল পড়ুয়াদের মানোন্নয়নই লক্ষ্য হয়ে থাকলে আগেই এমন ক্লাস করাতে হতো। কারণ, অক্টোবরে বিশেষ ক্লাস শুরু হওয়ার পরপরই একমাসের পুজোর ছুটি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্কুল খুলতে না খুলতেই আবার বার্ষিক পরীক্ষার দামামা। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যখন পরীক্ষা শেষ হল, তখন আবার চিহ্নিত পড়ুয়ারা স্কুলেই আসতে চায় না। দুবরাজপুরের বালিজুড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘খুব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সন্দেহ নেই। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এখন চিহ্নিত পড়ুয়ারাই তো স্কুলে আসছে না। কাদের জন্য ক্লাস করাবেন শিক্ষকেরা?’’ এমনটা যে হতে পারে, তা আগাম আঁচ করে পুজোর ছুটিতেই সব ক’টি বিশেষ ক্লাস করিয়ে দিয়েছেন কড়িধ্যা যদু রায় স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ক্লাস করিয়েছি ঠিকই। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার আগে এমন ক্লাস ঠিক কতটা উপকারে লাগল, তা নিয়ে নিশ্চিত নই।’’
আবার ভিন্ন সুরও আছে। রাজনগরের তাঁতিপাড়া আইটি গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অষ্টম পর্যন্ত পাশফেলের গণ্ডি না থাকায় এমন অনেক ছাত্রী নবম শ্রেণিতে রয়েছে, যাদের ভিত দুর্বল। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প সত্যিই ভাল। ছাত্রীদের এটা বোঝানো গিয়েছে। পরীক্ষার পরেও তাই বিশেষ ক্লাস চলছে।’’ কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা বলছেন, ‘‘ক্লাস নেওয়ার সময়টাই ভুল বাছা হয়েছে।’’
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের অতিরিক্ত প্রকল্প আধিকারিক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যেটুকু জেনেছি, ভালই চলছে রেমেডিয়াল টিচিং। উপকার আদৌ কতটা হল সেটা জানুয়ারিতে মূল্যায়নের পরেই বোঝা যাবে।’’