সংস্কার হবে রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্কের

প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ এবং উপযুক্ত নজরদারির অভাবে, নষ্ট হতে বসা রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্ককে এ বার ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হল বীরভূম বন দফতর। সব ঠিকঠাক থাকলে, চলতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

ইলামবাজার শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৮
Share:

সংরক্ষণের অভাবে বেহাল ফসিল পার্ক। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ এবং উপযুক্ত নজরদারির অভাবে, নষ্ট হতে বসা রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্ককে এ বার ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হল বীরভূম বন দফতর। সব ঠিকঠাক থাকলে, চলতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বীরভূমের ডিএফও কল্যাণ রাই বলেন, “ইলামবাজারের আমখই ফসিল পার্ককে আরও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এমন সম্পদকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে যা যা প্রয়োজন, সে সব ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”

Advertisement

জেলা বনদফতর সূত্রে খবর, বোলপুর রেঞ্জের ইলামবাজার বিটের চৌপাহাড়ি জঙ্গলে পুকুর কাটতে গিয়ে প্রস্তরীভূত অরণ্যের হদিস মিলেছিল বছর পাঁচেক আগে। ২৮টি আদিবাসী পরিবারের বসতি থাকা আমখই এলাকায় এমন ফসিলের হদিস পান স্থানীয় আদিবাসীরা। তৎকালীন ডিএফও কিশোর এস মাকড়ের নির্দেশে এবং স্থানীয় ভূতত্ববিদ ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শে ওই এলাকায় চলে খনন কাজ। তাঁর বদলির পর ডিএফও পদে আসেন সন্তোষা জি আর। শুধু খনন কাজই নয়, ওই প্রস্তরীভূত অরণ্যকে অন্যতম পর্যটনের জায়গা হিসেবে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয় বন দফতর।

এ রাজ্যে তো বটেই, ভারতেও এমন বড় আকৃতির শতাধিক ফসিলের সন্ধান মেলা ঘটনা এই প্রথম বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। স্বাভাবিক কারণেই ওই সকল ফসিলকে নিয়ে একটি উদ্যান গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বন দফতর। ২০১৫ সালের ২০ জুন তৎকালীন ডিএফও সন্তোষা জি আরের উদ্যোগে, ঘটা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই ফসিল পার্কের উদ্বোধন হয়। যেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা শাসক পি মোহন গাঁধী, পুলিশসুপার মুকেশ কুমার প্রমুখ।

Advertisement

ঘটনা হল, উদ্বোধনের বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত ওই ফসিল পার্কে, স্থানীয়দের পাশাপাশি শান্তিনিকেতন ঘুরতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটক, পড়ুয়া এবং গবেষকদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার ভাবনার সঙ্গে স্থানীয়দের রুজি রুটির ব্যবস্থাও ছিল সেই পরিকল্পনায়। আবার ফসিল পার্কের শৈল্পিক দিক, নান্দনিক দিকের কথা মাথায় রেখে শান্তিনিকেতনের শিল্পী কিংশুক সরকার, রেশমি বাগচি সরকারকে দিয়ে সাজানো হয়েছিল পার্কটি। উপযুক্ত সংরক্ষণ এবং নজরদারির অভাবে সে সবই এখন নষ্ট হতে বসেছে। গোড়াতে পানীয়জল, রাস্তাঘাট, চা ও জল খাওয়ার একটি ক্যান্টিন-সহ ওই পার্ককে ঢেলে সাজিয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার কথা ঘোষণাও করেছিলেন আমন্ত্রিতেরা। অভিযোগ, পর্যটনের বহু সম্ভাবনা থাকলেও সেই অর্থে আমখই ফসিল পার্ককে দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মহল।

ফলে, উদ্বোধনের এক বছর ঘুরতে না ঘুরতে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই ফসিল পার্ক। দেখভালের জন্য স্থানীয় আদিবাসীদের উদ্যোগে চলা খড়ের চালার ক্যান্টিন এখন বন্ধ! সংস্কারের অভাবে খড়ের চালা নষ্ট হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিধি মেনে, উপযুক্ত নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণার অভাবে বহু ফসিলের সাজানো উদ্যানও তথৈবচ। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে, এমন দুর্মূল্য সামগ্রীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বর্তমানের ডিএফও কল্যাণ রায় উদ্যোগী হয়েছেন। ডিএফও কল্যাণ বাবুর উপস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্য বনপাল প্রদীপ শুক্লকে শুক্রবার ওই এলাকা ঘুরে দেখান বোলপুরের রেঞ্জার নির্মল কুমার বৈদ্য। বনদফতর সূত্রের খবর, ফসিল পার্ক এলাকায় রাস্তাঘাট, ক্যান্টিন, ফসিলের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি মেনে সংরক্ষণ-সহ আরও আকর্ষণীয় করে তোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাতাল মুর্মু, বিজয় মুর্মুরা জানান, যত দ্রুত ব্যবস্থা হবে তত আমাদের ভাল। আমরা চাই ব্যবস্থা নিক বন দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন