Transfer Order of Doctor

দুই চিকিৎসককে ‘যেতে নাহি দিব’

সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, ওন্দা ও বড়জোড়া এই চারটি ব্লকের একাধিক গ্রামের মানুষের ভরসা পাঁচাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জঙ্গলঘেরা অন্তত ২৫ টি গ্রামের মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সোনামুখী শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৯
Share:

সোনামুখি ব্লকের পাঁচাল গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। আশেপাশে দশটি গ্রামে বাসিন্দারা, বিক্ষোভে সামিল হলেন বিকল্প চিকিৎসকের ব্যবস্থা না করে, কর্তব্যরত দুই চিকিৎসককে বদলির প্রতিবাদে। ছবি শুভ্র মিত্র।

“প্রাণ ফিরে পেয়েছি ওনাদের জন্য, বাবুদের যেতে দেব না।” দু’চোখে জল নিয়ে ধরা গলায় বললেন রুমা রায়, শিখা বাদ্যকররা। যখন চিকিৎসার গাফিলতিতে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে আসে আকছার, সেই পরিস্থিতিতে উলট পুরাণ সোনামুখীতে। ওই ব্লকের পাঁচাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসককেই একসঙ্গে বদলি করা হচ্ছে, এই খবর চাউর হতেই ফুঁসে ওঠেন গ্রামবাসী। চিকিৎসকদের আটকাতে সোমবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে হাতে পোস্টার নিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। গণস্বাক্ষরও করেন গ্রামবাসীরা। আবেদন পৌঁছে দেওয়া হবে বিষ্ণুপুর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে।

Advertisement

সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, ওন্দা ও বড়জোড়া এই চারটি ব্লকের একাধিক গ্রামের মানুষের ভরসা পাঁচাল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জঙ্গলঘেরা অন্তত ২৫ টি গ্রামের মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দশ শয্যা বিশিষ্ট অন্তর্বিভাগ চালু হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগী আসেন বলেই জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা। দুই চিকিৎসকের হাত ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর অন্য কোথাও ছুটতে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা মানু মিশ্র, নারান রায়, তুষারকান্তি তেওয়ারিরা বলেন, “২০ কিলোমিটার দূরে সোনামুখী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, বাঁকুড়া তো বাদই থাক। রাত বিরেতে আমাদের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।”

গ্রামবাসীরাই বলছেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই বহু জটিল রোগে রোগীরা সুস্থ হয়েছেন। দুই চিকিৎসকই বদলি হয়ে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। তবে পরিষেবা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গোপাল দাস। তিনি বলেন, “ওখানকার এক চিকিৎসককে স্বাস্থ্য দফতর সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিসিইউ-এ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) নিযুক্ত করার জন্য। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশই বহাল থাকবে। তবে ওখানেও চিকিৎসক পাঠানো হবে। পরিষেবার ঘাটতি হবে না।” পরিষেবা অব্যাহত থাকা নিয়ে প্রত্যয়ী রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

গ্রামবাসীর আবেগে ভাসছেন চিকিৎসকেরাও। তবে সরকারি নির্দেশ তাঁদের হাত-পা বেঁধেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানা ছাড়া আর কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তাঁরা। সেই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ গ্রামবাসী। ওঁদের চোখের আগুনে উঁকি দিচ্ছে বৃহত্তর আন্দোলনের শিখা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন