ধূসর: ধূলোর চাদরে ঢেকেছে রাজপথ। খানাখন্দে ভরা রানিগঞ্জ-মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সাপের মতো এঁকে বেঁকে আস্তে আস্তে গাড়ি চলছে। সামনে পিছনে এতটাই ধুলো উড়ছে যে কোনও গাড়ি আছে কিনা বোঝা দায়। এই বুঝি কিছু একটা ঘটল। রোদ ঝলমলে কিংবা মেঘলা আকাশ, পরিবেশ যেমনই হোক রানিগঞ্জ–মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের এটাই এখন পরিচিত দৃশ্য।
বৃষ্টি পড়লেই রাস্তার খানাখন্দ জলে ভরে যায়। আর রোদ উঠলেই আকাশ ঢেকে যায় ধুলোয়। সেই পথে সাইকেল থেকে শুরু করে মোটরবাইক, বাস-ট্রাক যে কোনও গাড়ি চলাচল করাই বিপজ্জনক। পাথর বেরিয়ে থাকা খানাখন্দে ভরা জাতীয় সড়কের মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকা বীরভূমের নাকপুর চেকপোস্ট থেকে নলহাটি পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা এখন শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব সময়ই যেন মরণফাঁদ। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৪ সালের প্রথম দিকে এই রাস্তা নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল। সেই রাস্তা তিন বছরের মধ্যেই বেহাল হওয়ায় ভুগছেন সকলেই।
এই ধূলোর দূষণে জেরবার এলাকার বাসিন্দা থেকে নিত্যযাত্রী তো বটেই। রেহাই পান না দূরপাল্লার বাসযাত্রী, বাসচালক থেকে ট্রাক চালক কিংবা খালাসিরাও। দূষণের শিকার ধাবা, হোটেল থেকে ছোটোখাটো খাবারের দোকানিরাও। নলহাটি থানার লোহাপুর এলাকার বাসিন্দা নিত্যযাত্রী আবুল কালাম, জসিমউদ্দিন শেখরা জানালেন, ধুলোর জন্য বাসের জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে হয়। রামপুরহাট আসার জন্য জাতীয় সড়কের উপর লোহাপুরের কাঁটাগড়িয়া মোড়ে সরকারি বা বেসরকারি বাসে চাপার পর থেকেই নলহাটি পর্যন্ত দমবন্ধ পরিবেশ। রাস্তার ধুলো দেখে মনে হয় কুয়াশায় ছেয়ে গিয়েছে আকাশ। ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থাতেই যাতায়াত করতে আর ভাল লাগছে না’’— খেদোক্তি আবুল কালামের। জাতীয় সড়কে চলাচলকারী দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার এক বাস কনডাক্টর আবার মনে করেন, এই রাস্তায় বাস চালানো উচিত না। বেসরকারি বাসের এক চালকের আশঙ্কা, ‘‘রাস্তার ধুলোয় জন্য খুব সাবধানে বাস না চালালেই যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’’ জাতীয় সড়কের ধারে কলিঠা মোড়ের খাবারের দোকানের মালিক শহিদ আহমেদ জানালেন, কাঁচের আলমারিতে খাবার রেখেও ধুলো দূষণ ঠেকাতে প্রতি মুহূর্তে দোকানের টেবিল চেয়ারের জমে থাকা ধুলো মুছে যেতে হয়। খাবার কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।
আবুল বাসার নামে এক বাসিন্দাও জানালেন, ধুলো সামাল দেওয়ার জন্য রাস্তার ধারের জানালা-দরজা বন্ধ রাখতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কারণে বাড়ির খাবার না ঢেকে রাখলে ধুলো পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আসবাবের ধুলো প্রতিদিন ঝাড়তে হয়।’’ এলাকার বাসিন্দা লালচাঁদ শেখ, মর্জিনা বিবি, দুলাল সরকাররা জানালেন, জাতীয় সড়কের নাকপুর চেকপোস্ট থেকে নলহাটি পর্যন্ত চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি হাইস্কুল আছে। ধুলোর জেরে মিড-ডে মিলের খাবার ঢেকে রাখতে হয়। প্রাণ হাতে করে চলাফেরা করতে হয় স্কুল পড়ুয়াদেরও।
জাতীয় সড়কের নির্বাহী বাস্তুকার নিশিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক যেখানে খারাপ আছে, সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। এখন প্যাকিং করে বিটুমিন দেওয়ার কাজ হবে। আশা করা যায়, তাতে ধূলো দূষণ কিছুটা হলেও কমবে।” দফতর সূত্রের খবর, নাকপুর চেকপোস্ট থেকে নলহাটি পর্যন্ত ৬২ লক্ষ টাকার কাজ হবে। রাস্তাটি দ্রুত আমূল সংস্কারের জন্য ‘ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।