সাগ্নিকের লড়াই উচ্চ মাধ্যমিকেও

উপযুক্ত চিকিৎসার পাশাপাশি বাবা-মা যদি সন্তানের পাশে থাকেন, তা হলে কোনও প্রতিকূলতাই যে প্রতিকূলতা নয়— ফের তা প্রমাণ করল সিউড়ির সমন্বয়পল্লির বাসিন্দা সাগ্নিক কুণ্ডু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:০৩
Share:

সাগ্নিক কুণ্ডু। —নিজস্ব চিত্র

মাধ্যমিকে ফল ভাল হয়েছিল। তাকেও ছাপিয়ে গেল উচ্চ মাধ্যমিকের ফল।

Advertisement

উপযুক্ত চিকিৎসার পাশাপাশি বাবা-মা যদি সন্তানের পাশে থাকেন, তা হলে কোনও প্রতিকূলতাই যে প্রতিকূলতা নয়— ফের তা প্রমাণ করল সিউড়ির সমন্বয়পল্লির বাসিন্দা সাগ্নিক কুণ্ডু। জন্ম থেকেই মস্তিস্কের পক্ষাঘাত জনিত রোগ (সেরিব্রাল পলসি) আক্রান্ত, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সিউড়ি বেণীমাধব ইন্সটিটিউশনের এই ছাত্র এ বার পেয়েছে ৪১৩ নম্বর। মাধ্যমিকের থেকেও ১২ শতাংশ বেশি নম্বর। এমনিতে অন্যদের থেকে অনেক ধীর গতিতে কাজ করতে পারে সাগ্নিক। কথাও জড়িয়ে যায়। মস্তিস্কে যাতে চাপ না পড়ে, তা মাথায় রেখে দিনে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টার বেশি পড়শোনা করার ছাড়পত্র ছিলনা তার। তাতেও হতাশ করেনি ছেলে।

যদিও লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না কুণ্ডু দম্পতির কাছে। দম্পতি জানালেন, জন্মের পর থেকে ২৪ দিন টানা ইনকিউবেটরে রাখাতে হয়েছিল সাগ্নিককে। তার পর থেকেই ছেলের অসুস্থতার কথা বুঝতে পারেন তাঁরা। সিউড়িরই একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা সুপ্রিয়াদেবী। স্বামী গণেশবাবু একসময় সিউড়ি শহরের নামকরা বিজ্ঞান বিভাগের গৃহশিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ট আয় করতেন। সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, ‘‘আমি চাকরি করলেও প্রায় সব টিউশন ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র ছেলের জন্য একটানা লেগে আছে ওর বাবা। সকালে শরীরচর্চা থেকে ছেলের পড়াশোনা। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সর্বক্ষণ শুধু ছেলের পিছনে। এখনও সেই রুটিন চলছে। পাছে ছেলে কোথাও আঘাত পায়।’’ কিন্তু যত্নের পাশাপাশি সন্তানকে আত্মবিশ্বাস দিতেও পিছপা হননি দম্পতি। শারীরিক প্রকূলতার জন্য রাইটার প্রাপ্য ছিল সাগ্নিকের। কিন্তু স্বনির্ভারতা গড়ে তুলতে মাধ্যমিক থেকেই ছেলেকে রাইটার নিতে দেননি গণেশবাবু। এ বারও তাই। ‘‘দিনের শেষে লড়াইটা যে ওকেই করতে হবে,’’— বলছেন গণেশবাবু। জন্মের পর সাগ্নিকের যখন প্রতিবন্ধী শংসাপত্র তৈরি হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ রয়েছে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী বলে। লাগাতার চিকিৎসা এবং বাবা-মা পাশে থাকায় সেই সাগ্নিক অনেকটাই ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। পড়ার বাইরে অবসর সময়ে তার সব চেয়ে প্রিয় উপায় গানবাজানা। কিছুটা জড়ানো গলায় মঙ্গলবার সাগ্নিক বলল, ‘‘ফলে আমি খুশি। ইচ্ছে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করার।’’

Advertisement

উচ্ছ্বসিত জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা সমন্বায়কের দায়িত্বে থাকা শুকদেব চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘পাশে থেকে সাগ্নিককে মা-বাবা যে ভাবে গড়ে তুলেছেন, তা সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে। এই ধরনের অসুখে ভোগা মানুষের লড়াইয়ে বড় উদাহরণ সাগ্নিক। দৃষ্টান্ত ওর বাবা-মাও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন