উৎসাহী: ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সামনে ভিড় পড়ুয়াদের। রাজনগরে। নিজস্ব চিত্র
দু’দিনের ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী শুক্রবার শুরু হল রাজনগরের জয়পুর উচ্চবিদ্যালয়ে। সমগ্র শিক্ষা মিশনের আর্থিক সহায়তায় ও ব্যবস্থাপনায় কলকাতার বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্সটিটিউট অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের শাখা পুরুলিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে সে জন্যে একটি বাস এসেছে। সেই বাসেই রয়েছে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে থাকা বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিষয়ক ২৪টি মডেল।
হাতের নাগালে এমন একটি বিজ্ঞান প্রদর্শনী দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত জেলার প্রান্তিক ওই স্কুল এবং পার্শ্ববর্তী স্কুলের পড়ুয়ারা। খুশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘ক্লাসের মধ্যে দেখানো সম্ভব হয় না এমন বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিষয়ক বিজ্ঞান মডেল দেখে হাতেকলমে পাঠ নিতে পারবে পড়ুয়ারা।’’ সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী বলেন, ‘‘অঙ্ক ও বিজ্ঞানকে পড়ুয়াদের মধ্যে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরতে এবং বিজ্ঞানচেতনাকে উসকে দিতে এমন প্রদর্শনী ভীষণ ভাবে উপযাগী। রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন আমাদের চিঠি দিয়েছিল জেলায় প্রান্তিক চারটি স্কুল বেছে দিতে। আমরা সেটা করেছি। নির্বাচিত স্কুল ও তার আশপাশের পড়ুয়ারা ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী দেখে উপকৃত হবে।’’
জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশনের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর বিকাশ রায় জানিয়েছেন, প্রতিটি স্কুলে দু’দিন করে থাকবে বাসটি। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বীরভূমের রাজনগরের জয়পুর উচ্চবিদ্যালয় ছাড়াও তালিকায় রয়েছে রামপুরহাটের তারপীঠ রোডে বামদেব বিদ্যাপীঠ, নলহাটির বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ এবং বোলপুর উচ্চবিদ্যালয়। ২০ মার্ছ ওই বাসটি জেলা থেকে চলে যাবে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বস্তরে জাতীয় উন্নয়নকে তুলে ধরতে অন্যতম চালিকা শক্তি বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন। ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষা তাই আরও মজাদার, আকর্ষণীয় ও অর্থবহ হওয়া জরুরি। যাতে এক জন পড়ুয়া তাতে মনোনিবেশ করতে পারে এবং তার উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল শক্তি বিকশিত হয়। সেই উদ্দেশ্যেই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ‘রাষ্ট্রীয় আবিষ্কার অভিযান’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছে। ওই কর্মসূচির লক্ষ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করা এবং তাতে উৎসাহ জুগিয়ে স্কুলে স্কুলে ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে গত বছর নভেম্বরে রাষ্ট্রীয় আবিস্কার সপ্তাহ উদযাপন করা হয়েছিল। সেই সময় জেলার ৩৮টি স্কুলে পড়ুয়ারাই পানীয় জলের মান পরীক্ষা করে দেখেছিল। সেই কর্মসূচিরই অংশ ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী।
জয়পুর স্কুলের শিক্ষকেরা বলছেন— ‘পাঠ্যসূচির মধ্যে থাকা নানা বিজ্ঞান বিষয়ক তত্ত্ব যেমন, কম্পণশীল বস্তু শব্দ করে, ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র, প্রতিবিম্বের পার্শ্বিয় পরিবর্তন, বা পিথাগোরাস থিওরি-র মতো নানা বিষয়ে সহজ বিজ্ঞান মডেল দেখে খুশি হয়েছে পড়ুয়ারা। শুধু প্রদর্শনী নয় বিজ্ঞান বিষয়ক ‘অ্যানিমেটেড ফিল্ম’ও খুব উৎসাহ নিয়ে দেখেছে পড়ুয়ারা।’ ওই স্কুল জানায়, রাজনগরের আরও চারটি স্কুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শুক্রবার দু’টি স্কুলের ৭৮ জন পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা এসেছিলেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষক বসন্ত গড়াই জানান, বিজ্ঞান (পদার্থবিদ্যা), অঙ্ক বিষয়ক এমন অনেক মডেল রয়েছে, যেগুলি দেখে খুব সহজেই পড়ুয়ারা হাতেকলমে পাঠ নিতে পারে। ক্লাসে সেটা দেখানো সম্ভব হয় না। বিজ্ঞান চেতনা বাড়াতে এমন প্রদর্শনী আরও বেশি করে হলে ভাল হয়।
স্কুলের পড়ুয়া জুঁই চৌধুরী, নীলাঞ্জনা রায়, সুজয় বাগদি বলছে, ‘‘অনেক কিছু অনেক সহজে শিখলাম। প্রদর্শনী খুব ভাল লেগেছে।’’