প্রতীকী ছবি।
জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ২৪টি স্কুলে এ বারেও প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ হচ্ছে না— সদ্যপ্রকাশিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত তালিকা (স্কুল লিস্ট) দেখে এমনই আশঙ্কায় ভূগছেন ওই সব স্কুলের টিচার ইন-চার্জ ও অন্য শিক্ষকেরা।
সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ওয়েবসাইটে প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের কাউন্সেলিং-ও শুরু করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পরে বিভিন্ন স্কুলে প্রধান শিক্ষকের অভাব দূর হতে চলেছে। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলায় শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক নিয়োগ হবে ৯৮টি স্কুলে।
কিন্তু ব্যাতিক্রম ২৪টি স্কুল। প্রশাসনিক সূ্ত্রে জানা গিয়েছে— যে সব স্কুল তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে, সেগুলির কোনওটিতে ২ বছর, কোনও স্কুলে ৬ বা ৭ এমনকি ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকার পদ শূন্য। সমস্ত নথিপত্র দাখিল করার পরেও কেন ওই সব স্কুলের নাম তালিকায় থাকল না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শিক্ষক মহলে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তালিকায় নাম না থাকা স্কুলের মধ্যে রয়েছে মহম্মদবাজারের সেকেড্ডা উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১০ সাল থেকে সেখানে প্রধান শিক্ষক নেই। ১ হাজার ৮৫০ জন পড়ুয়া রয়েছে সেই স্কুলে। শিক্ষক ১৮ জন। স্কুল সূত্রে খবর, প্রধান শিক্ষকের অভাবে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করা চাপের। সেই স্কুলের টিআইসি মহম্মদ নুরুল ইসলামের আক্ষেপ, ‘‘গত বছর এপ্রিলে জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে সব তথ্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন এসএসসি স্কুল লিস্টে এই স্কুলের নাম থাকল না তা জানি না।’’ প্রায় একই বক্তব্য নলহাটি ২ ব্লকের আটকুলা উচ্চবিদ্যালয়ের টিআইসি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের। তিনি বলছেন, ‘‘অনেক দিন ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। কিন্তু তালিকায় আমাদের স্কুলের নাম নেই বলে শুনেছি। স্কুলে ৫০০ পড়ুয়া। শিক্ষক ৬ জন। এক জন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে কোনও একটা ক্লাস বাতিল করতে হয়। প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রশাসনিক কাজ অনেক মসৃণ ভাবে হতে পারত।’’ দু’বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকা নেই লাভপুরের কুরুন্নাহার রূপসা দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুলের টিচার ইন-চার্জ মিতালি চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘শিক্ষিকার অভাবে পড়ুয়া কমছে। এ বারও প্রধান শিক্ষিকা পাব না বলে মনে হচ্ছে।’’
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, জেলা শিক্ষা দফতর থেকে নথিপত্র সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় না পৌঁছনোর জন্যই এই পরিস্থিতি।
সমস্যা যে তৈরি হল, তার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি প্রলয় নায়কও। কিন্তু প্রলয়বাবুর দাবি, অনেক স্কুল সঠিক সময়ে নথি না দেওয়ার জন্যও সমস্যা হয়েছে।
এ নিয়ে কী বলছেন ডিআই?
বীরভূমের স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সরকার বলছেন, ‘‘বিষয়টি সঠিক ভাবে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’ তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গত এপ্রিলে স্কুল সার্ভিস কমিশন জেলায় প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকার পদ শূন্য, এমন ৯৮টি স্কুলের নাম পাঠিয়ে যাচাই করতে বলে। দেখা যায়, তার পরেও বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যেগুলি তালিকায় জায়গা পেতে পারে। সেই সব স্কুলের কাছে নথি পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল। ২৪টি স্কুল নথি পাঠায়। তার পর মে সালে তা পাঠানো হয় এসএসসি এবং কেন্দ্রীয় অফিসে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দ্বিতীয় দফার স্কুলগুলিই তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন বাদ গেল, তা বোঝা যাচ্ছে না।’’