এক বছরের মধ্যে ফের দুষ্কৃতী তাণ্ডব দুর্গাপুরের কাঁকসার বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা এইচএফসিএলে। রবিবার বিকেলে কারখানার ভিতরেই দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় দু’জনকেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ও বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
রবিবার দুপুর থেকেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় গোটা এলাকায়। কাঁকসা থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে বন্ধ সার কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এক জন বন্দুকধারী-সহ চার জন। এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, পাহারা দেওয়ার সময়ে আচমকা দেখা যায় কারখানার ভিতরে জঙ্গল থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। কী কারণে ধোঁয়া বের হচ্ছে, তা এগিয়ে দেখতে যান হারাধন দত্ত ও শিবানন্দ সিংহ নামে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। অভিযোগ, সেই সময়ই তাঁদের উপরে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী রড, লাঠি হাতে চড়াও হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় ওই দু’জনকে। ভাঙচুর চালানো হয় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে থাকা সাইকেলগুলিও। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দু’জন নিরাপত্তারক্ষী চিৎকার জুড়লে চলে আসেন তাঁদের সঙ্গীরাও। শেষমেশ বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দ শুনেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
গুরুতর জখম অবস্থায় দু’জনকেই উদ্ধার করা হয়। খবর দেওয়া হয় কাঁকসা থানার পুলিশে। পুলিশ জানিয়েছে, হারাধনবাবুকে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও শিবনন্দনবাবুকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁদের মাথায় চোট লেগেছে। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।
তবে এই কারখানায় এর আগেও দুষ্কৃতী-তাণ্ডব হয়েছে। ২০১৫-র ১০ ফেব্রুয়ারি এই কারখানার ভিতর থেকে শেড ভেঙে লোহা ও যন্ত্রপাতি চুরি করতে আসে কয়েক জনা দুষ্কৃতী। তবে সে যাত্রা ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ২টি পাইপগান উদ্ধার হয়। ওই বছরেই ৫ এপ্রিল ফের ওই একই কারখানায় লুঠপাট চালাতে আসে কয়েক জন। পুলিশ দেখে বোমা ছোড়ার হুমকি দেয় তারা। তবে পুলিশ তাদের তাড়া করার সময় নিজেদেরই বোমা ফেটে জখম হয় ৩ দুষ্কৃতী। তাদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের জালে ধরা পড়ে ৫ জন দুষ্কৃতী। এই কারখানা তো বটেই, গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুরের রাতুড়ি-অঙ্গদপুর, কাঁকসার বামুনাড়া শিল্পতালুক, ফরিদপুরের (লাউদোহা) সরপি-সহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনা হয়েছে।
এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শিল্পমহলও। বেঙ্গল সাবআরবান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষ বলেন, ‘‘বারবার ওই কারখানায় দুষ্কৃতীরা হামলা চালাচ্ছে। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ করা দরকার।’’ কাঁকসা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।