মাঠে আছড়ে মারল হাতি

একটি হাতিকে পুনর্বাসন দিয়ে, দুটি হাতিকে নিকেশ কতেও হাতির হানা থেকে মুক্তি মিলছে না। শুক্রবার ভোরে বড়জোড়ার বেলেশোল গ্রামের ফাঁকা মাঠে আবারও এক ব্যক্তিকে পিষে মারল হাতি। হাতির হানায় ওই ব্যক্তির দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

এখানেই ফটিক বাউড়িকে পিষে মারে দাঁতালটি।—নিজস্ব চিত্র

একটি হাতিকে পুনর্বাসন দিয়ে, দুটি হাতিকে নিকেশ কতেও হাতির হানা থেকে মুক্তি মিলছে না। শুক্রবার ভোরে বড়জোড়ার বেলেশোল গ্রামের ফাঁকা মাঠে আবারও এক ব্যক্তিকে পিষে মারল হাতি। হাতির হানায় ওই ব্যক্তির দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলেশোল গ্রামের বাসিন্দা ফটিক বাউরি (৫৮) এ দিন ভোরে প্রাতকৃত্য করতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে হাতির সামনে পড়ে যান তিনি। গ্রামের ফাঁকা মাঠে হাতিটি ফটিকবাবুকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে মারে।

এই ঘটনার পরে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে। বড়জোড়ার রেঞ্জ আধিকারিক মোহন শীট ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে। ডিএফও (উত্তর) পিনাকী মিত্র জানান, এ দিনই মৃতের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফটিকবাবু খেত মজুরি করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী সন্ধ্যার আক্ষেপ, “সুস্থ মানুষটা ভোরে ঘর থেকে বেরোল। আর ফিরল না। হঠাৎই সব শেষ হয়ে গেল!”

Advertisement

ফটিক বাউড়ি

হাতির হানায় মৃত্যুর তালিকা বেড়েই চলেছে এই জেলায়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে শুধু বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগেই ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষে ছ’মাসের মধ্যেই এই বনবিভাগে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে পাঁচ। হাতির হানায় মৃত্যু মিছিল রুখতে জেলার কয়েক’টি স্থানীয় হাতিকে ‘খুনে হাতি’ চিহ্নিত করে তাদেক পুনর্বাসন দেওয়া অথবা নিকেশ করার অভিযানে নামে বন দফতর। দফতরের এক সূত্রে জানা যাচ্ছে, মোট চারটি খুনে হাতিকে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কুনকি হাতির সাহায্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছিল বন দফতর। যার মধ্যে একটি হাতিকে সুস্থ ভাবে ধরতে পারলেও পর পর দুটি হাতিকে গুলি করে মারা হয়।

এই ঘটনার পরে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে অভিযান বন্ধ করে দেয় বন দফতর। জানা গিয়েছে, যে হাতিটি এ দিন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সেই হাতিটিকেও ধরার লক্ষ ছিল বন দফতরের। বন দফতরের খাতায় হাতিটি পি-৪ নামে পরিচিত। তবে মাঝপথে অভিযান বন্ধ হয়ে পড়ায় হাতিটিকে শেষ পর্যন্ত আর ধরার চেষ্টা চালানো হয়নি। এই হাতিটি বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে বলেও জানিয়েছে বন বিভাগের এক কর্তা। কেন এই হাতিটিকে ধরতে ফের অভিযান চালানো হল না? ডিএফও (উত্তর) এ প্রসঙ্গে মুখই খুলতে চাননি।

এ দিনের ঘটনার পরে বন দফতরের হাতি ধরার অভিযানকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বড়জোড়ার সিপিএম নেতা সুজয় চৌধুরী বলেন, “কোটি টাকা খরচ করে বন দফতর এই জেলার খুনে হাতি ধরতে নামল। কিন্তু তাতে যে আখেরে লাভ হয়নি তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন।” অবিলম্বে হাতিটিকে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন