যুবকের মানবিক মুখ, প্রাণে বাঁচলেন বৃদ্ধা

শেষ বিকেলের আলোয় স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল, রাস্তার ধারে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে ব্যস্ত জনতা। কেউ তারাপীঠে পুজো দিয়ে ফিরছেন, কেউবা বেরিয়েছেন ইদের দিনে নিছকই ঘুরতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তারাপীঠ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

হাসপাতালের বেডে বৃদ্ধা। —নিজস্ব চিত্র

শেষ বিকেলের আলোয় স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল, রাস্তার ধারে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে ব্যস্ত জনতা। কেউ তারাপীঠে পুজো দিয়ে ফিরছেন, কেউবা বেরিয়েছেন ইদের দিনে নিছকই ঘুরতে। কারওরই অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই সে দিকে! এ ভাবে অন্তত ঘণ্টাপাঁচেক পড়ে থাকার পরে বৃদ্ধার দিকে চোখ পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা গুরুসরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গুরুসরণবাবু এবং তাঁর পরিচিতদের উদ্যোগে শেষমেষ বছর সত্তরের ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ভর্তি করাতে আরও দেরি হলে বৃদ্ধার প্রাণ সংশয়ও হতে পারত!

Advertisement

চিকিৎসকদের কাছে ওই বৃদ্ধা নিজের পরিচয়ে জানিয়েছেন— নাম অপর্ণা বিত্তার। বাড়ি ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ষাটপলসা পঞ্চায়েতের উচপুর গ্রামে। তবে, ওই বৃদ্ধা আদৌ সঠিক পরিচয় বলতে পেরেছেন কিনা সে বিষয়ে নিঃসংশয় নন চিকিৎসকেরা। পরিবারের সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে নানা রকম তথ্য দিয়েছেন তিনি। ভিক্ষে করে সংসার চালান, এমনটাও বলেছেন। আরও জানিয়েছেন, তিনি তারাপীঠ মন্দিরে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে নদীতে পা ধুতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান। তারপরে কে বা কারা উদ্ধার করে তাঁকে সেতুর ধারে রেখে দেয়।

ওই বৃদ্ধার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন চিকিৎসক আনন্দ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘ওই বৃদ্ধা এখন বিপদ-মুক্ত। তবে আরও দেরিতে হাসপাতালে আনলে খারাপ কিছু হয়ে যেতেই পারত। কেননা প্রাথমিক পরীক্ষায় জানা গিয়েছে ওই সময়ে তাঁর ‘স্ট্রোক’ হয়ে থাকতে পারে। তাঁর রক্তাপ্লতার সমস্যাও রয়েছে।’’

Advertisement

এই ঘটনায় উস্কে গিয়েছে মানবিকতার প্রশ্নও। সময়ে গুরুসরণবাবু তৎপর না হলে কী হত, তা ভেবে শিউরে উঠেছেন অনেকেই।

ঠিক কী হয়েছিল?

গুরুসরণবাবু জানাচ্ছেন, ব্যক্তিগত কাজে তারাপীঠের দ্বারকা নদের সেতুর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই বৃদ্ধার আর্তনাদ কানে আসে। এরপরেই তিনি পরিচিতদের সে কথা ‘হোয়াটস্‌অ্যাপ’-এ জানান। চান সাহায্যও। দেরি না করে একে একে হাত বাড়িয়ে দেন অক্ষয় ধীবর, অমৃতলাল ঘোষ, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁরাই বৃদ্ধাকে অটোতে করে নিয়ে যান হাসপাতালে। দ্রুত হয়ে যায় শয্যার ব্যবস্থাও। তার পরেই শুরু হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।

এ দিকে, বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার ঘটনা সাড়া ফেলেছে প্রশাসনে। শুক্রবার সকালে বৃদ্ধার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস। মহকুমা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক আব্দুর রেজ্জাক বিশ্বাসকে হাসপাতালে পাঠিয়ে খোঁজ নেন সুপ্রিয়বাবু। প্রশাসনের তরফে বৃদ্ধাকে একটি কম্বল, কাপড় দেওয়া হয়। বৃদ্ধাকে তুলে এনে হাসাপাতালে ভর্তি করিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দিয়েছেন যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবার আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন