আদালতের নির্দেশ ইসিএল কর্মীকে

বৃদ্ধা মাকে সাত হাজার টাকা করে খোরপোশ

বাবার ইসিএলের চাকরি পেয়েছেন ছেলে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে মাকে দেখেন না সেই ছেলে। সাত বছর ধরে চরম সমস্যায় থেকে শেষে ছেলের কাছে খোরপোশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মা। সেই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াল আদালত। বুধবার রঘুনাথপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক প্রথম শুনানিতেই ওই ইসিএল কর্মীকে তাঁর বৃদ্ধা মাকে মাসে ৭০০০ টাকা মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০২:০২
Share:

বাবার ইসিএলের চাকরি পেয়েছেন ছেলে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে মাকে দেখেন না সেই ছেলে। সাত বছর ধরে চরম সমস্যায় থেকে শেষে ছেলের কাছে খোরপোশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মা। সেই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াল আদালত। বুধবার রঘুনাথপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক প্রথম শুনানিতেই ওই ইসিএল কর্মীকে তাঁর বৃদ্ধা মাকে মাসে ৭০০০ টাকা মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

Advertisement

বৃদ্ধা নেহারী নাথের বাড়ি নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায়। বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, প্রতি মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে ছেলে বাবলু নাথকে মা নেহারীদেবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭০০০ টাকা জমা করতে হবে। প্রসঙ্গত গত বছর বিচারক সন্তোষকুমার পাঠকের এজলাসেই এই ধরনের একটি মামলার নিস্পত্তি হয়েছিল। সেই সময়ে বিচারক বৃদ্ধ বাবা সকলদেও সাউকে প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর চাকুরিজীবী ছেলে সুরেশ সাউকে। দু’টি মামলাতেই প্রথম শুনানিতেই নিস্পত্তি করেন এই বিচারক। প্রথমটির মতো এ বারেও দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে মাসোহারার পরিমাণ নির্ধারিত হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অন্য কোথাও আর আবেদন করা যাবে না বলে জানানো হয়।.

পরিবার সূত্রে খবর, নেহারীদেবীর স্বামী মনোহর নাথ ইসিএল কর্মী ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাত বছর আগে তিনি চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে বাবার পরিবর্তে চাকরি পান ছেলে বাবলু নাথ। আদালতে নেহারীদেবী অভিযোগ করেছেন, চার বছর আগে মৃত্যু হয়েছে মানোহরবাবুর। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর প্রতি কোনও দায়িত্বই পালন করেন না ছেলে। তিনি কষ্টে রয়েছেন। এর পরেই গত ১৫ ফ্রেবুয়ারি ছেলের কাছ থেকে খোরপোশ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

এ দিন বিচারক রায়ে মায়ের প্রতি ছেলের নৈতিক দায়িত্ব, কর্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে জানিয়েছেন বাবা-মাকে দেখা ছেলের নৈতিক কর্তব্য। এই কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যায় না। নেহারীদেবীর আইনজীবী শিশিরকুমার রায় ও শৈবাল রায় জানান, নেহারীদেবী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরেই গত ১৯ ফ্রেবুয়ারী বিচারক অন্তর্বতী রায়ে ৫০০০ মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুধবার প্রথম শুনানিতে ছেলের মাসিক বেতনের প্রেক্ষিতে মাসোহারার পরিমাণ আরও ২০০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০০ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এ দিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পরে চাকরি পাওয়ার কিছু সময় পরেই বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন বাবলু নাথ। নেহারীদেবীর আত্মীয়রা জানান, বাবা বেঁচে থাকাকালীন বাবলু প্রতি মাসে বাবা মাকে ২৭০০ টাকা করে দিতেন। কিন্তু তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে সেই টাকা কমিয়ে মাসে ১৩০০ করে দেয়। অথচ বাবলুর বেতন তুলনায় ভালই। তাই চূড়ান্ত আর্থিক অনটনে পড়েছিলেন নেহারীদেবী। আদালতে ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, গত চার বছর যাবত্‌ তাঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্কই রাখেননি ছেলে। কোনওদিন খোঁজ খবর পর্যন্ত নিতে আসতেন না। গত কয়েক বছর পারবেলিয়ায় ইসিএলের একটি পরিত্যক্ত আবাসনে থাকতেন নেহারীদেবী। ছোট মেয়ে তাঁর দেখাশোনা করতেন। নেহারীদেবীর আইনজীবী বলেন, “সামান্য পরিমাণ টাকায় ওই বৃদ্ধার জীবন নির্বাহ করা সম্ভবপর হয়ে উঠছিল না বলেই তিনি বাধ্য হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।.এ দিন রায়দানের পরেও ছেলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বা মামলার বিষয়ে কিছু বলতে চাননি ওই বৃদ্ধা।”

চেষ্টা করেও বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর আইনজীবীর বিকাশ ঘোষাল বলেন, “আর্থিক সমস্যা থাকলেও মাকে দেখা নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করেই বাবলু নাথ তাঁর মাকে মাসে ৭০০০ টাকা মাসোহারা দিতে রাজি হয়েছেন। বাবলুবাবু আদালতে জানিয়েছেন, মা রাজি হলে তাঁকে নিজের কাছে রেখেও তিনি দেখভাল করতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন