‘আত্মঘাতী’ এসআই, বিতর্ক শালতোড়ায় 

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ কাজে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বনাথ। ঘটনার সময়ে থানার অন্য পুলিশ কর্মীরা ডিউটি অফিসারের ঘরের বাইরে ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালতোড়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৫
Share:

বিশ্বনাথ মণ্ডল।

ঘড়িতে তখন রাত প্রায় এগারোটা। হঠাৎই গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠল থানা চত্বর। পুলিশ কর্মীরা দৌড়ে থানার ভিতরে গিয়ে দেখলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ডিউটি অফিসার। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শালতোড়া থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সাব ইন্সপেক্টর বিশ্বনাথ মণ্ডল (৪৩) গঙ্গাজলঘাটির বাসিন্দা। দেড় বছর আগে তিনি শালতোড়া থানায় যোগ দেন। তার আগে পুরুলিয়ার বলরামপুর থানায় ছিলেন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ কাজে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বনাথ। ঘটনার সময়ে থানার অন্য পুলিশ কর্মীরা ডিউটি অফিসারের ঘরের বাইরে ছিলেন। হঠাৎই গুলির আওয়াজ শুনে পুলিশ কর্মীরা ভিতরে ঢুকে দেখেন ডিউটি অফিসারের চেয়ারের পাশে বিশ্রাম করার জন্য রাখা খাটে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বিশ্বনাথ। তাঁর বাঁ দিকের কান দিয়ে রক্ত পড়ছিল। বুকের কাছে হাতে ধরা ছিল তাঁর সার্ভিস রিভলভারটি। খবর পেয়েই শালতোড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক থানায় আসেন। বিশ্বনাথকে পরীক্ষা করে জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক সমস্যার জেরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বিশ্বনাথ। শুক্রবার তাঁর ব্যারাকে থেকে একটি স্যুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। সূত্রের খবর ওই নোটে ‘আমি হেরে গেলাম’ লেখা রয়েছে। কিছু জায়গায় অল্প টাকার ঋণ বকেয়া রয়েছে বলেও নোটে উল্লেখ রয়েছে।

Advertisement

যদিও পারিবারিক সমস্যার কারণে বিশ্বনাথ আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মানতে নারাজ তাঁর পরিবার। এই ঘটনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপকেই দায়ী করেছেন তাঁর বিশ্বনাথের স্ত্রী বন্দনা মণ্ডল ও আত্মীয়েরা। বন্দনা বলেন, “অমানুষিক কাজের চাপেই মনমরা হয়ে থাকতেন উনি। ছুটি চাইলেও ছুটি পেতেন না। এর জন্য আক্ষেপও করতেন আমাদের কাছে।” এ দিন বাঁকুড়া মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বনাথের এক শ্যালক গৌতম মণ্ডল বলেন, “পুলিশের কাজের চাপ গত কয়েক বছরে মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর পাশাপাশি আরও নানা ধরণের কাজের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সব নিয়ে অবসাদে ভুগছিলেন বিশ্বনাথ।” বিশ্বনাথের পরিবারের এই দাবির প্রেক্ষিতে জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগেই পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বিশ্বনাথবাবু। এ ছাড়া শালতোড়া ও গঙ্গাজলঘাটির দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় প্রায়ই বাড়ি চলে যেতেন তিনি। বুধবারই তো বাড়ি গিয়েছিলেন।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই পুলিশ কর্মী। একটি স্যুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে ওঁর ব্যারাক থেকে। আত্মহত্যার নেপথ্যে কী কারণ, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

কত দিন ছুটি পান পুলিশকর্মীরা? জেলার কয়েকটি থানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুলিশের সাপ্তাহিক কোনও ছুটি নেই। বছরে ১৪ দিন ‘ক্যাজুয়াল লিভ’। দুর্গাপুজোর সময়ে কাজ করলে বছরে অতিরিক্ত ১০ দিন ছুটি মেলে। এ ছাড়া ‘আর্নড লিভ’ প্রাপ্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই ছুটি পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার। পুলিশ সূত্রের খবর, যে সমস্ত থানায় কাজের চাপ কম, সেখানেও অনেক সময়ে টানা ২৪ ঘণ্টা ‘ডিউটি’ দেওয়া হয় আধিকারিকদের।

থানার ওসিরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন। কিন্তু এসআই ও এএসআইরা থাকেন ব্যারাকে, একসঙ্গে। সাপ্তাহিক ছুটি নেই। বছরেও ছুটি মেলে হাতেগোনা। ছুটি প্রাপ্য থাকলেও অনেক সময়ে তা পান না বলে দাবি কিছু আধিকারিকের।

জেলার কিছু পুলিশকর্মী জানান, ব্যারাক আর থানা— তাঁদের জীবনটা গতে বাঁধা হয়ে যায়। পেশার খাতিরে এমন কিছু পুলিশকর্মীর সঙ্গে আলাপ রয়েছে মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপের। তিনি মনে করেন, পুলিশের কাজ এমনিতেই এখন মাত্রাতিরিক্ত চাপের কাজ। তার সঙ্গে উপরতলার এক শ্রেণির পুলিশকর্তার অমানবিক আচরণ, রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে সমানে যুঝে যেতে হয় নিচুতলার পুলিশকর্মীকে। সেখান থেকে অবসাদ তৈরি হতেই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন