একমনে: মূর্তি গড়ছে সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির চাতালে পা ছড়িয়ে বসে আপন মনে মাটির তাল দিয়ে মূর্তি গড়ে সিমলান্দি গ্রামের সুপ্রিয় দাস। সিমলান্দি বীরভূমের এক প্রান্তিক গ্রাম। নলহাটি শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। সুপ্রিয় এ গ্রামের খুদে মৃৎশিল্পী। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। পাড়া-পড়শিরা বলেন, জন্ম থেকেই সুপ্রিয়র মধ্যে যেন সাক্ষাৎ সরস্বতী ভর করেছেন। যেমন লেখাপড়ায়, তেমনই তার হাতের জাদু। আঙুলের ছোঁয়ায় সরস্বতী প্রতিমা মৃণ্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হন। এ বছর সরস্বতী পুজোর আগে তার তৈরি প্রতিমা বিক্রিও হয়েছে। ‘‘অভাবের সংসারে ছেলের রোজগারের টাকায় চাল, ডালের জোগানটা হয়ে গিয়েছে।’’ মলিন হেসেও গর্বিত বাবার মতো বলেন প্রতিমা শিল্পী বলরাম দাস।
করোনার জেরে গত দু’বছরে ছোটখাটো মৃৎশিল্পীদের আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে। বড় কোনও পুজোর বরাত নেই এবারও। বছর আটেকের সুপ্রিয়র অবশ্য বরাত নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা নেই। সরস্বতীর পরে এবারই সে তৈরি করছে দুর্গা প্রতিমা। দেড় ফুট বাই এক ফুটের একচালা প্রতিমার খড়ের কাঠামো তৈরি শুরু করেছিল মাস খানেক আগে থেকে। মাটির প্রলেপ পড়ার পরে এখন ‘ফাইনাল টাচ্’-এর অপেক্ষা। স্কুল বন্ধ, তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনভর তার প্রতিমাকে চিন্ময়ী করে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত সুপ্রিয়।
সুপ্রিয়র মা পিয়াদেবী বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ও রং তুলি, কাগজ, কার্ডবোর্ড দিয়ে প্রতিমা তৈরির চেষ্টা করে। সরস্বতী ও মাটির খেলনা তৈরি করেছে বেশ কিছু, কিন্তু দুর্গা প্রতিমা এই প্রথম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে সবসময় ওকে উৎসাহ দিয়েছি এবং সাহায্য করেছি। আর ও যদি চায় ভবিষ্যতে এই শিল্পকে নিয়ে পড়াশোনা করবে।’’
খুদে শিল্পীর এই ছোট্ট প্রতিমা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন সিমলান্দির বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই বরাতও মিলেছে পুজো কমিটির তরফ থেকে। কিন্তু সুপ্রিয় নাছোড় প্রথম প্রতিমা সে নিজেই পুজো করবে। সুপ্রিয়’র কথায়, ‘‘মূর্তি বানাতে ভাল লাগে। তারপর করোনা পরিস্থিতিতে বাবাকে সাহায্য করতে কিছু খেলনা আর সরস্বতী প্রতিমা বানিয়েছিলাম। এবার দুর্গা প্রতিমা বানাতে বেশ লাগছে। এরপরে নিয়মিত তৈরি করার ইচ্ছে আছে।’’