পায়ে বেড়ি, তবু সুর খেলাতেন সাঁওতাল বিদ্রোহের যোদ্ধা বাজাল

সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম মুখ সিধো, কানহু, বীরসা মুণ্ডার নাম সকলের জানা। কিন্তু কজন জানেন বাজাল সরেনের নাম? যাঁর বাঁশিতে সুর খেলতো ব্রিটিশ পুলিশ পায়ে বেড়ি পরিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও। নেহাতই সাদামাটা মরমী এই মানুষটির সাঁওতাল বিদ্রোহের যোদ্ধা হয়ে ওঠার পিছনে কারণ সেই মহাজন ও সুদখোরদের অত্যাচার। 

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৭
Share:

স্মরণ: মূর্তির সামনে বাজাল সরেনের বংশধরেরা। নিজস্ব চিত্র

সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম মুখ সিধো, কানহু, বীরসা মুণ্ডার নাম সকলের জানা। কিন্তু কজন জানেন বাজাল সরেনের নাম? যাঁর বাঁশিতে সুর খেলতো ব্রিটিশ পুলিশ পায়ে বেড়ি পরিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও। নেহাতই সাদামাটা মরমী এই মানুষটির সাঁওতাল বিদ্রোহের যোদ্ধা হয়ে ওঠার পিছনে কারণ সেই মহাজন ও সুদখোরদের অত্যাচার।

Advertisement

১৮৫৫ সালে শুরু হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহের অন্যতম যোদ্ধা বাজাল সরেনের মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং তাঁর সম্পর্কে আলোচনাকে ঘিরে শনিবার একটি অনুষ্ঠান ও মেলা হল সিউড়ির আবদারপুরে। অনুষ্ঠানের আয়োজক, আবদারপুর আদিবাসী ক্লাব। সহযোগিতায় ছিল আদিবাসী গাঁওতা। আলোচনাচক্র শনিবার শেষ হলেও মেলা চলবে আরও দুদিন। আয়োজকদের বক্তব্য, সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতৃত্বে থাকা সিধো, কানহু, এবং বীরসা মুণ্ডার নাম সকলেরই জানা। কিন্তু এমন অনেকেই ছিলেন যাঁদের ত্যাগ, বীরত্ব সম্পর্কে এই প্রজন্ম জানে না। তেমনই একজন যোদ্ধা হলেন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বড় কালাজোড় গ্রামের বাজাল সরেন।

বাজালের স্ত্রী ও পরিবারের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে রূপসিংহ তাম্বুলি নামে এক মহাজনকে খুন করার দায়ে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বন্দি করেছিল। তার পর তাঁর আর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। বাজাল সরেনের উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে নানা গল্প-কথা শোনা যায়। আয়োজকদের তরফে ভীমসেন মুর্মু এবং সাংস্কৃতিক কর্মী লক্ষ্ণণ হাঁসদারা বলেন, ‘‘প্রামাণ্য নথি নেই। তবে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের বংশপরম্পরায় যে ইতিহাস পাওয়া যায়, সেটা অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বড় কালাজোড় গ্রামের বাজাল সরেন সিধো কানহু-র সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি শোষণ ও তাঁর স্ত্রীর উপর অত্যাচারের শাস্তি দিতেই ওই মহাজনকে হত্যা করেন তিনি।’’

Advertisement

শিল্পী হিসেবে সুখ্যাতি ছিল বাজালের। তার বাঁশি শুনতে ভিড় জমতো। ব্রিটিশ পুলিশ এলাকায় গানের আসর বসিয়ে ফাঁদ পেতেছিল। সুরের নেশায় সেই ফাঁদে পা দেন বাজাল। ধরার পরে পায়ে বেড়ি আর হাতকড়া পরিয়ে তাঁকে সিউড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। তখনও বাঁশি ছাড়েননি ওই তিনি। কেমন মানুষ ছিলেন বাজাল, সিউড়ি জেল থেকে কী ভাবে উধাও হয়ে গিলেন তা নিয়ে প্রচলিত গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা ও অন্য নানা বিষয় নিয়ে আলোচনাসভায় আলোকপাত করেন বক্তারা। আলোচনায় যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে স্টিফান টুডু গোড্ডা কলেজের সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক হোলিকা মারান্ডি-সহ কয়েকজন এসেছিলেন। হোলিকা বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড সরকার আগেই বাজালকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মেলা হয় সেখানে। বীরভূমে এমন আয়োজন মুগ্ধ করেছে।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বাজাল সরেনের পরিবারের ছয় সদস্য। তাঁরা বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগই বর্তমান প্রজন্মকে অতীত সম্পর্কে জানতে উৎসাহী করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন