হাতে-হাতে: তদারকিতে বিডিও পৌষালি চক্রবর্তী। ছবি: সুজিত মাহাতো
অশোকে পলাশে রঙিন হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া। সেই ‘বনপলাশি’-র রং এ বারে স্বনির্ভরতারও। দোলের আগে বলরামপুর ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী স্বনির্ভরদলগুলির মহিলারা জোর কদমে ফুলের থেকে আবির তৈরির কাজ করে চলেছেন। বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে তৈরি সেই আবির বাজারে আসবে ‘বনপলাশি’ নামে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ পলাশের ফুল থেকে পরিবেশ বান্ধব আবির তৈরির ভাবনা প্রাথমিক ভাবে যাঁর মাথায় আসে, তিনি বিডিও (বলরামপুর) পৌষালি চক্রবর্তী। রসায়নের ছাত্রী পৌষালি বলেন, ‘‘একেবারে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কী ভাবে আবির বানানো যায় সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর দলগুলিকে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহায়তায় পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে শুরু হয় প্রশিক্ষণ।
শুধু পলাশ নয়, গাঁদা, অপরাজিতা এমনকী বিট থেকেও তৈরি হচ্ছে সোনালি, গেরুয়া, নীল আর মেরুন রঙের আবির। পৌষালি জানান, প্রথম বছরে ৫০০ কিলোগ্রাম আবির তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই কাজে আর্থিক সহায়তা করছে তফসিলি জাতি ও উপজাতি উন্নয়ন নিগম। আপাতত বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের মোট ষাট জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কী ভাবে তৈরি হবে আবির? ফুল প্রথমে জলে সেদ্ধ করে রঙিন নির্যাস বার করে নেওয়া হবে। তার সঙ্গে মেশানো হবে ফটকিরি, ট্যালকম পাউডার আর সুগন্ধী। প্লাস্টিকের প্যাকেট নয়, তৈরি হওয়া আবির মিলবে বাঁশের সুন্দর কৌটোয়। পৌষালি জানান, বলরামপুর ব্লকের কালিন্দী সম্প্রদায় বাঁশ দিয়ে নানা জিনিস তৈরি করে। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কৌটো তৈরি শেখানো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই কলকাতার ‘বিশ্ববাংলা’ এবং শান্তিনিকেতনের ‘মঞ্জুষা’-র স্টলে আবির পাঠানো হয়েছে। প্রতি একশো গ্রামে তাঁদের কমবেশি ৭ টাকা লাভ থাকছে বলে জানান স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। কাজের ফাঁকে নির্মলা সিং সর্দার, পার্বতী টুডুরা জানান, একশো, আড়াইশো এবং পাঁচশো গ্রাম আবিরের কৌটো থাকছে। আড়াইশো গ্রামের দাম পড়বে ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
সেই অল্প দামেই প্রকৃতির স্পর্শে রঙিন হবে উৎসব।