জেলার টাকায় ছিল না আগ্রহ

তদন্তকারীদের দাবি প্রায় একশো কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছিল ওই সংস্থা। তার বেশির ভাগটাই খরচ হয়েছিল নার্সিংহোম তৈরিতে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০১:২২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ভিন রাজ্য থেকে তোলা হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। কিন্তু নিজেদের এলাকা থেকে নয়। মঙ্গলবার আদ্রার শাশ্বত গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রিজ-এর প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্যের আর্থিক অপরাধ দমন বিভাগ। আর তার সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে এমন নানা তথ্য।

Advertisement

তদন্তকারীরা মনে করছেন, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যে তাঁরা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবেন না, সেটা সত্যরঞ্জন চৌধুরী ও অন্য ডিরেক্টররা গোড়া থেকেই বুঝেছিলেন। স্থানীয় আমানকারী থাকতে গন্ডগোল বেশি হতে পারে ভেবেই এই কৌশল নিয়েছিলেন তাঁরা। তবে ঝামেলা থেকে একেবারে যে নিস্তার পেয়েছিলেন তেমনটাও নয়। ২০১৬ সালে যখন কলকাতায় সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ছে, কাছাকাছি সময়েই বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে খোঁজ করতে করতে জেলায় চলে এসেছিলেন বেশ কিছু আমানতকারী। তাঁরা আদ্রায় সংস্থার নার্সিংহোমের সামনে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেই সময়ে সত্যরঞ্জন টাকা ফেরতরে আশ্বাস দিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাঁদের বাড়ি পাঠান।

তদন্তকারীদের দাবি প্রায় একশো কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছিল ওই সংস্থা। তার বেশির ভাগটাই খরচ হয়েছিল নার্সিংহোম তৈরিতে। আদ্রার উপকণ্ঠে রাঙ্গুনি এলাকায় আদ্রা-কাশীপুর রাস্তার পাশে পাঁচ বিঘা জমিতে তৈরি হয়েছিল নার্সিংহোমের ঝাঁ চকচকে চার তলা বাড়ি। ভিতরে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। ঠিক পাশেই ডাক্তারদের থাকার আবাসন। সেটিও চার তলা। রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় বড় মাপের কোনও নার্সিংহোম নেই। ওই নার্সিংহোমে ভিড় উপচে পড়বে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রথম থেকেই নার্সিংহোমের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে। বর্তমানে নামেই সেটি চালু ছিল। কদাচিৎ রোগী এলে ডেকে আনা হত চিকিৎসককে। নন্দুকা গ্রামে ৭০ বিঘা জমিতে তৈরি হয়েছিল সিমেন্ট কারখানা ও ছাই ইট তৈরির কারখানা। এই ভাবে বাজার ধরতে পারেনি সেগুলিও। অনেক আগেই উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছিল।

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন চিটফান্ডের কর্তাদের সঙ্গে রাজনৈতির প্রভাবশালীদের দহরম মহরমের অভিযোগ উঠেছে আগে। এ ক্ষেত্রেও সংস্থার ডিরেক্টরদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক কেমন ছিল সেটা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বাজার থেকে তোলা টাকায় কতটা দানখয়রাতি করা হয়েছে, কোথায় কোথায় টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, সে সব নিয়ে শুরু হয়েছে প্রাথমিক খোঁজ খবর। সত্যরঞ্জনরা পুরুলিয়া-সহ নামে ও বেনামে কতটা জমি কিনেছেন, সেটাও দেখছে ডিইও। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জমিতে বিনিয়োগ করলে খুব সহজে বেশি মুনাফা হয়। ফলে জমি কেনার প্রবণতা থাকাটা খুব স্বাভাবিক।’’ ডিইও সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পত্তি নিলাম করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

তবে ওই নার্সিংহোম ও নার্সিংহোম মিলিয়ে যে জনা পঁচিশেক কর্মী রয়েছেন, এখন তাঁদের রুজি বড়সড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন