মুচলেকা দিয়েও বিয়ে

গ্রাম থেকে খবর পেতে তৎপরতা

মঙ্গলবার বরাবাজার ব্লকে ওই বৈঠকে এসডিপিও (মানবাজার), বিডিও, সিডিপিও, বিএমওএইচ, থানার আইসি এবং বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত স্তরের পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বরাবাজার শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মুচলেকা লিখিয়েও নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না! পাত্রীকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে দিচ্ছেন পরিজনেরা। পুরুলিয়ার বরাবাজারে এমনই কয়েকটি ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে প্রশাসন ও চাইল্ডলাইন নড়েচড়ে বসল। এ বার তাই মুচলেকা আদায়ের পরেও স্বস্তিতে না থেকে কী করে ১৮ বছরের আগে নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ সুনিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে বসলেন প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

মঙ্গলবার বরাবাজার ব্লকে ওই বৈঠকে এসডিপিও (মানবাজার), বিডিও, সিডিপিও, বিএমওএইচ, থানার আইসি এবং বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত স্তরের পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।

বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এই ব্লকে বেশ কিছু নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারি তাদের মধ্যে কয়েকজন নাবালিকাকে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে গিয়ে অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ১৮ বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে অনেক অভিভাবক মুচলেকা দিয়েছিলেন। আইন ভেঙ্গে এই ধরনের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’

Advertisement

গোপন বিয়ে যাতে বন্ধ করা সম্ভব হয়, সে জন্য পঞ্চায়েত সদস্যদের খোঁজখবর রাখতে এবং প্রয়োজনে তা প্রশাসনের কানে তুলতে বলা হয়।

জেলা চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার জানান, জেলায় গত কয়েক বছরে তাঁরা প্রচুর নাবালিকার বিয়ে আটকে দিয়েছেন। তবে এখনও জেলায় নাবালিকা বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। নাবালিকা বিয়ের তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে, বরাবাজার, আড়শা, বাঘমুণ্ডি প্রভৃতি কয়েকটি থানা।

অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে বরাবাজার ব্লকের এক পঞ্চায়েত সদস্য নিজের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে গিতে জন্মের নকল শংসাপত্র পর্যন্ত করিয়েছিলেন। তাই তৃণমূলস্তরে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।’’

তবে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ বিয়ে বন্ধ হয়ে গেলে, পাত্র-পাত্রীর পরিবারে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, সে কথা তুলে ধরেন কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য।

সভায় তাঁরা জানান, বিয়ের দিন চাইল্ডলাইন পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বিয়ে বন্ধ করায় অনেকেই আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেকের মণ্ডপ তৈরি থেকে এমনকী রান্নাও হয়ে যায়। তার পর বিয়ে বন্ধ করা সত্যিই সমস্যার।’’

বিডিও বলেন, ‘‘অনেকসময় আমাদের কাছে শেষ মুহূর্তে খবর আসে। তাই কিছু করার থাকে না। তবে, ১৮ বছরের কমে বিয়ে দিলে মেয়েটিরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজের মেয়ের স্বার্থেই কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার ভাবনা অভিভাবকদেরই মন থেকে তাড়াতে হবে।’’

তিনি জানান, ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দেওয়ার পরেও কোনও পরিবার মেয়েকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে কি না, সে দিকে পঞ্চায়েত সদস্য ও এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিদের নজর রাখতে হবে। তবেই নাবালিকা বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন