পরিচিতের প্রশ্নে পড়া থমকে ছিল রমিকের

‘এ বারও টেলিভিশনের পর্দায়, কাগজে তোমার নাম দেখব তো?’—এমন কথা শুনতে শুনতে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পর মনমরা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দু’সপ্তাহ কার্যত পড়াশোনা করতে পারেননি। ছেলেকে বুঝিয়েছিলেন মা, বাবা। বলেছিলেন, ফলের কথা না ভেবে মন দিয়ে পরীক্ষা দিতে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

স্পর্শমণি: সোনার টুকরো। মায়ের সঙ্গে রমিক। নিজস্ব চিত্র

পড়শি, পরিজন, বন্ধুদের বারবার এক প্রশ্নে শুধুই বেড়েছিল তাঁর উৎকণ্ঠা।

Advertisement

‘এ বারও টেলিভিশনের পর্দায়, কাগজে তোমার নাম দেখব তো?’—এমন কথা শুনতে শুনতে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পর মনমরা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দু’সপ্তাহ কার্যত পড়াশোনা করতে পারেননি। ছেলেকে বুঝিয়েছিলেন মা, বাবা। বলেছিলেন, ফলের কথা না ভেবে মন দিয়ে পরীক্ষা দিতে।

সেই টোটকায় কাজ হল। ২০১৬-র মাধ্যমিকে দ্বিতীয় দুবরাজপুর শ্রী শ্রী সারদা বিদ্যাপীঠের রমিক দত্ত জায়গা করে নিলেন উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতেও। রাজ্যে সম্ভাব্য পঞ্চম তিনি-ই। অঙ্কে ১০০, পদার্থবিদ্যায় ৯৯, রসায়নে ৯৯, জীববিদ্যায় ৯৮ এবং ইংরেজিতে ৯০ মিলিয়ে ৪৮৬ নম্বর পেয়ে জেলায় সম্ভাব্য প্রথমও।

Advertisement

মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও এত ভাল ফল, স্বভাবতই খুব খুশি রমিক। আপ্লুত বাবা-মা, পরিজন, বন্ধু, পড়শি, গোটা দুবরাজপুরবাসী। গর্বিত রমিকের স্কুলের শিক্ষকেরা। সকালে খবর ছড়াতেই দুবরাজপুর রঞ্জনবাজারে রমিকদের নতুন বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে। আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা, বর্ধমানের উখড়ায় কর্মরত জীবনবিমা সংস্থার কর্মী রমিকের বাবা মলয়রঞ্জন দত্ত। তিনি ও তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মণ্ডলের তখন ব্যস্ততার শেষ নেই। এক দিকে লাগাতার মোবাইল ফোনে বেজে চলছে। অন্য দিকে উত্তর দিচ্ছেন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের। কখনও চিত্রগ্রাহকদের অনুরোধে ছেলের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে বলছেন, ‘‘তুই যা দিয়েছিস আমাদের আর চাওয়ার কিছু নেই।’’ ছেলের রেজাল্ট কেমন হবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন মলয়বাবুও। তিনি বলেন, ‘‘কারও কারও কথা শুনে খারাপ লাগত। ওঁরা বলত, মাধ্যমিকে ভাল ফল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক অত সহজ নয়। আজ সব কথার জবাব দিয়েছে আমার ছেলে।’’

মাধ্যমিকের সময় ক্রিকেট প্রিয় ছিল রমিকের। সচিন তেণ্ডুলকর পছন্দের ক্রিকেটার। দু’বছরে কিন্তু বদলেছে তাঁর পছন্দ। এখন এ পি জে আব্দুল কালাম রমিকের ‘আইডল’। রমিকের বক্তব্য, ‘‘ওঁর সব কথাই অনুপ্রেরণা।’’ আর অবসরে খেলার বদলে গান, ভিডিও গেম। আইআইটিতে পড়ার লক্ষ্য রমিকের। তার প্রবেশিকা ফলের অপেক্ষাতেই রয়েছেন তিনি।

অত্যন্ত বিনয়ী ছাত্রটি যে রাজ্যের সেরাদের মধ্যে ফের স্থান পেতে পারে, তা আশা করেছিলেন শিক্ষকেরাও। রমিকের স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস চট্টরাজ ও রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষসেবক স্বামী সত্যশিবা নন্দ বলেন— ‘‘রমিক এমন এক ছাত্র যে স্কুলের মান বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বকালের সেরা রেজাল্ট ওর। আমরা গর্বিত।’’

আর রমিক বলছেন, ‘‘মা-বাবা, শিক্ষক, সহপাঠীরা সকলেই আমার পাশে ছিলেন। সাধ্যমতো পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। মেধা তালিকায় ফের জায়গা পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন