Bolpur

‘স্যর কথা শুনব, আমাদের ছেড়ে যাবেন না’, পড়ুয়াদের আর্তিতে চোখে জল শিক্ষকের

বোলপুর শহর থেকে কিছুটা দূরের ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করেন আসানসোলের জামুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সুমন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৪০০। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে  রয়েছেন ২৬ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:১২
Share:

সিঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষককে ঘিরে পড়ুয়ারা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সবে তাঁর বদলির নির্দেশ এসে পৌঁছেছে। কিন্তু পড়ুয়ারা কিছুতেই তাঁকে অন্য স্কুলে যেতে দেবেন না। প্রিয় শিক্ষককে নিজেদের স্কুলে রাখতে তাই ক্লাস বয়কট করে ধর্নায় বসল পড়ুয়ারা। শনিবার বোলপুরের সিঙ্গি হাইস্কুলে এমন ঘটনায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ওই শিক্ষক, সুমনকুমার মাজি। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল ছেড়ে যেতে আমারও ইচ্ছে নেই। পড়ুয়াদের ভালবাসায় আমি মুগ্ধ। কোনও দিন ভাবিনি এমন ভালবাসা পাব। কিন্তু সরকারি নির্দেশ, তার উপরে বেশ কিছু পারিবারিক সমস্যাও রয়েছে, তাই আমি নিরুপায়।”

Advertisement

বোলপুর শহর থেকে কিছুটা দূরের ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করেন আসানসোলের জামুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সুমন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৪০০। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে রয়েছেন ২৬ জন। সুমন স্কুলের বাংলার শিক্ষক। বোলপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। ২০১৩ সালে ওই স্কুলে যোগদান করার পর থেকেই তিনি পড়ুয়াদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পড়ুয়া, অভিভাবকদের মতে, তাঁর চেষ্টায় স্কুলের পড়াশোনা-সহ অন্য উন্নতিও হয়েছে। গরিব ও অসহায় পড়ুয়াদের পাশেও নানা সময়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বদলির জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। সম্প্রতি সেই নির্দেশ এসেছে। বাড়ির কাছে কাল্লা হরিপদ হাইস্কুলে শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর চলে যাওয়ার কথা।

স্কুলে এ দিন বিষয়টি জানাজানি হতেই পড়ুয়ারা প্রথম ক্লাস করার পর ওই শিক্ষককে ঘিরে নাছোড় আবদার শুরু করে। পড়ুয়াদের দাবি, তাদের প্রিয় শিক্ষককে ওই স্কুলেই থাকতে হবে। পড়ুয়াদের এমন আবদারে চোখে জল এসে যায় সুমনের। বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করেন বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ারা। বেশ কিছু পড়ুয়া এ দিন হাতে বোর্ড নিয়ে শিক্ষককে স্কুলে থাকার জন্য কাতর আবেদন জানায়। সেই বোর্ডে তারা লিখেছে, ‘‘স্যর আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আমরা শিক্ষক ছাড়া হয়ে যাব।’’ কেউ লিখেছে, ‘‘আমরা আপনাকে যেতে দেব না। আপনার সব কথা মেনে চলব।’’ ঘণ্টা তিনেক শিক্ষককে ঘিরে রাখে পড়ুয়ারা।

Advertisement

পরে পড়ুয়াদের বুঝিয়ে ক্লাসে পাঠান স্কুলের বাকি শিক্ষকেরা। ওই স্কুলের পড়ুয়া হেমন্ত মণ্ডল, অভিজ্ঞান সাঁইদের কথায়, “পড়াশোনার বাইরে ওঁর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তাই আমরা স্যরকে কোনও ভাবেই স্কুল থেকে যেতে দেব না।” স্কুলের প্রধানশিক্ষক সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে একজন শিক্ষকের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ওঁকে আমরাও আন্তরিকভাবে জানাচ্ছি উনি এই স্কুলেই যেন থেকে যান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন