ঠেকে ছাত্রেরা, তাজ্জব পুলিশ

আধো অন্ধকারে কয়েকজন বসে নেশা করছিল। হঠাৎ সেখানে একদল পুলিশ এসে হানা দিল। নেশা তখন ছুটে যাওয়ার জোগাড়। ধমক-ধামক তো জু়টলই। কিন্তু পুলিশ যে মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায় নামবে তা কে ঠাহর করেছিল! নেশাড়ুদের মধ্যেও যে ছাত্র থাকবে পুলিশ কর্মীরাই বা সে আন্দাজ করেছিলেন না কি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৭
Share:

আধো অন্ধকারে কয়েকজন বসে নেশা করছিল। হঠাৎ সেখানে একদল পুলিশ এসে হানা দিল। নেশা তখন ছুটে যাওয়ার জোগাড়। ধমক-ধামক তো জু়টলই। কিন্তু পুলিশ যে মাস্টারমশাইয়ের ভূমিকায় নামবে তা কে ঠাহর করেছিল! নেশাড়ুদের মধ্যেও যে ছাত্র থাকবে পুলিশ কর্মীরাই বা সে আন্দাজ করেছিলেন না কি?

Advertisement

তেমনটাই হয়েছে শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপুর শহরে। ক’দিন আগে এক মহিলা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মা ও দাদা চোলাই কারবারিদের হাতে মার খাওয়ার পর টনক নড়ে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশের। শহরের কাদাকুলি মাহাপাত্র পাড়ার সেই ঘটনার পরেই কিছু ঠেকে হঠাৎ হানা দিয়ে বিষ্ণুপুরে এসডিপিও লাল্টু হালদার ভাঙচুর চালান। মদের কারবারিদের ধরা যায়নি। তবে নষ্ট করা হয় বেশ কয়েক লিটার চোলাই।

এ বার তাই হাতেনাতে অবৈধ মদের কারবারিদের ধরতে শুক্রবার মাঝরাতে অভিযানে নেমে তাজ্জব ওই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ঠেকে হানা দিয়ে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। দেখি ওইসব ঠেকে খদ্দের ১৪ থেকে ২৪ বয়সি ছেলেরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়া, কেউ পলিটেকনিকের ছাত্র!’’

Advertisement

পড়াশোনা ছেড়ে অবৈধ ঠেকে মদ খেতে আসা এক ছাত্রের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, পানিপথের যুদ্ধ কত সালে হয়েছিল। বলতে পারলে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে ‘গার্জেন কল’ করা হবে। নেশার ঘোরে একে পুলিশকে দেখেই আক্কেল গুড়ুম। তার উপরে ইতিহাসের সাল-তারিখ! চোখে সর্ষে ফুল দেখার জোগাড় ওই ছাত্রের। কয়েকটা ঢোঁক গিলেও উত্তর দিতে পারেনি সেই ছাত্র। সেখান থেকে অন্য আরও কয়েকটি ঠেকেও স্কুল পড়ুয়াদের ছাত্রদের কাছে একই প্রশ্ন করেছিলেন এসডিপিও। তিনি বলেন, ‘‘ওই পলিটেকনিক পড়ুয়া কেন, আটক করে থানায় আনা অন্য পড়ুয়াদের কাছেও ওই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।’’

মদ বিক্রেতা ও ক্রেতাদের পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছিল। কয়েকজনের বাড়ির লোকেদেরও ডাকা হয়। কিন্তু অবাক করে দিয়েছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘পলিটেকনিকের ওই ছাত্রের বাবা স্থানীয় একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। তিনি ছেলে আটক হয়েছে শুনে শুকনো মুখে বলেন— ‘দু’-চার ঘা মেরে ছেড়ে দিন স্যার।’ ছেলে বখাটে হয়ে যাচ্ছে দেখে বাবারই শাসক করার কথা। উল্টে তিনি একজন শিক্ষক হয়ে আমাদের বলছেন, মারধর করে তাঁর ছেলেকে ছেড়ে দিতে! ছেলে কেন চোলাই ঠেকে গভীর রাত পর্যন্ত মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে, এতদিন তা জানতে চান না কেন?’’

তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ১২ জনকেই ছেড়ে দিয়েছে। তবে তিন বেআইনি চোলাই কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে আছেন কাটানধার এলাকার মনসা পাত্র, ওই এলাকারই রাজকুমার দাস এবং নিমতলা এলাকার নীলকন্ঠ ঘোষ। ঠেকগুলি থেকে প্রচুর মদ নষ্ট করা হল এবং বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই ধরনের অভিযানে স্থানীয় মহিলারা পুলিশ কর্মীদের সহযোগিতা করছেন।

এসডিপিও বলেন, ‘‘নাবালিকদের নেশা ছাড়াতে দেখছি পাড়ায়-পাড়ায় সচেতনতা শিবির করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন