কে বলেছিল এখানে স্কুল করতে? খাটাল সরে গেলে খাব কী?

সবে থালায় মিড-ডে মিল নিয়ে বেরিয়েছে সপ্তম শ্রেণির দুর্যোধন লোহার। থকথকে গোবরে পা পড়ে আছাড় খেয়ে পড়ল মাটিতে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৭
Share:

অস্বাস্থ্যকর: সামনে খাটাল। পিছনে স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

সবে থালায় মিড-ডে মিল নিয়ে বেরিয়েছে সপ্তম শ্রেণির দুর্যোধন লোহার। থকথকে গোবরে পা পড়ে আছাড় খেয়ে পড়ল মাটিতে!

Advertisement

প্রায়ই এমনটা ঘটে বিষ্ণুপুরের পানশিউলি তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুলে। সমস্যাটা কী? স্কুল লাগোয়া খাটাল। একদম গা-ঘেঁষে। পাঁচিল নেই। সম্প্রতি স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, গোবরের স্তূপ আর মিড-ডে মিল রান্নার কড়াইয়ের মধ্যে ইটের পাতলা একটা দেওয়াল দাঁড়িয়ে। জায়গায় জায়গায় জল জমে। গোবরের স্তূপ বৃষ্টিতে ধুয়ে চলে আসছে স্কুলের দিকে।

বিষ্ণুপুর ব্লকের বেলশুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় পানশিউলি গ্রাম। গা ঘেঁষে বিষ্ণুপুর শহর। ১৯৯৬ সাল থেকে সেখানে চলছে জুনিয়র হাইস্কুলটি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস দাস জানান, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০৫ জন। আশপাশের বাসুদেবপুর, ময়রাপুকুর, শিরোমণিপুর, ঘুঁটবন, কানগোড় থেকেও ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। দেবাশিস বলেন, ‘‘চারপাশ এমন অস্বাস্থ্যকর হয়ে রয়েছে, অসুখ-বিসুখ হয়ে যেতে পারে।’’

Advertisement

স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, নাকে-মুখে কাপড় চেপে রান্না করছেন উলশি দে, আলো লোহার, লক্ষ্মী লোহাররা। বললেন, ‘‘সবেতেই গোবরের গন্ধ। এতগুলো বাচ্চার খাবার তৈরি হয়। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি।’’ অষ্টম শ্রেণির সুদীপ লোহার, মানসী ঘোষ, সপ্তম শ্রেণির রাহুল পাল, ষষ্ঠ শ্রেণির সুমনা লোহার, পঞ্চম শ্রেণির সেলিম শেখরা বলে, ‘‘নাক চাপা দিয়ে খাবার খাই। ক্লাসঘর নোংরা হয়ে থাকে।’’ স্কুলের শিক্ষক তাপস দাস জানান, মশা আর খাটালের দূর্গন্ধের চোটে দরজা-জানলা এঁটে আলো জ্বালিয়ে রাখতে হয়।

স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি অতুন লোহারের দাবি, মালিককে একাধিক বার বলা হয়েছে খাটালটি স্কুল থেকে দূরে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তিনি গা করেননি। দেখা যায়নি গোবরের স্তূপ সরানোর কোনও লক্ষণও। খাটালটির মালিক মথুর পাল, প্রসেনজিৎ পালরা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের খাটাল ছিল আগে। পরে স্কুল স্কুল। কে বলেছিল এখানে স্কুল করতে? খাটাল সরে গেলে খাবো কী আমরা?’’ তাঁদের দাবি, পুনর্বাসন পেলে তবেই খাটাল সরানো সম্ভব।

এ বার তাহলে কী? পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন— বিভিন্ন জায়গায় সমস্যার কথা জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকে বসার তোড়জোড় চলছে। সেখানে এই ব্যাপারে আলোচনা হবে। অভিভাবকদের মধ্যে উত্তম লোহার, নারায়ণ লোহার, কৃষ্ণ লোহাররা বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদর স্কুলে পাঠিয়ে খুব চিন্তায় থাকি। প্রশাসনের উচিত বিষয়টা দেখা।’’

বিষ্ণুপুর মহকুমার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক সঞ্জীব দাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ বেলশুলিয়া পঞ্চায়েতে জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত থেকে সীমানা পাঁচিলের ব্যাবস্থা হয়েছে।’’ তিনি জানান, সেই কাজ কতদূর সেটা খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আপাতত মিড-ডে মিল রান্নার ঘরটি একটু দূরে কোনও ফাঁকা জায়গায় করা যায় কি না সেটাও দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন