‘জেলার সেরা’ সাহিনারা

বাড়ির কাজ করার ফাঁকে মা-কে কাঁথাস্টিচের কাজকর্ম করতে দেখেছিল তারা। আবার পড়াশোনার ফাঁকে মা-কে সেই কাজে সাহায্যও করত তারা। কাঁথাস্টিচের ওই সামান্য কাজ থেকে পরিবারের রুজিরুটি হতো না ঠিকই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইলামবাজার শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

সিউড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির কাজ করার ফাঁকে মা-কে কাঁথাস্টিচের কাজকর্ম করতে দেখেছিল তারা। আবার পড়াশোনার ফাঁকে মা-কে সেই কাজে সাহায্যও করত তারা। কাঁথাস্টিচের ওই সামান্য কাজ থেকে পরিবারের রুজিরুটি হতো না ঠিকই। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে যত অল্পই হোক, আয়ের একটা উপায় হতো। আর সেই কাজই যে এক দিন তাদের ‘জেলা সেরা’ করবে— ভাবতেই পারছে না ইলামবাজারের মনোহরপুর-নাচনসাহা হাইস্কুলের পড়ুয়ারা।

Advertisement

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা মিশনের পরিচালনায় সিউড়ির ডিআরডিসি হয়ে গেল ২০১৬-’১৭ মরসুমের প্রতিযোগিতামূলক কলা উৎসব। জেলার বিভিন্ন স্কুলের পাশাপাশি ইলামবাজার থানার বিলাতি পঞ্চায়েতের মনোহরপুর-নাচনসাহা হাইস্কুলও যোগ দিয়েছিল ওই প্রতিযোগিতায়। নাচ, গান, নাটক, লোকনৃত্য, লোকসঙ্গীতের মতো বিষয়গুলিকে নিয়ে ফি বছর এমন প্রতিযোগিতা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “দৃশ্য কলা বিভাগে নবম শ্রেণির সাত জন ছাত্রী প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। কলা উৎসবে আমাদের স্কুল প্রথম স্থান পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে ওই পড়ুয়ারা।”

ইলামবাজার থানার বিলেতি পঞ্চায়েতের ওই স্কুলে মহেশ্বরপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সাহিনা খাতুন, সাবিনা খাতুন, পূর্বপাড়ার সাফিয়া খাতুন, মরিয়ম খাতুন, পারভিন খাতুন ও মসজিদপাড়ার সালমা খাতুন এবং লাগোয়া নাচনসাহা গ্রামের প্রতিবন্ধী সুমনা অঙ্কুর সেখানে নবম শ্রেণিতে পড়ে। এই সাত পড়ুয়াই যোগ দিয়েছিল দৃশ্যকলা উৎসবে। বুধবার সফিয়ারা বলল, ‘‘মা-কে কাজের সময়ে সহায়তা করতাম। তাতেই কাঁথাস্টিচের কাজে হাতেখড়ি। আমরা ‘কাঁথাস্টিচ এ ফেমাস আর্ট ইন শান্তিনিকেতনি ট্র্যাডিশন’ থিমের উপর কাজ করেছি। তা ছাড়াও কাঁথাস্টিচের কাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, নির্মল বিদ্যালয়ের মতো বিষয়গুলিও। সেই কাজ প্রতিযোগিতায় জেলার সেরা করবে, তা ভাবিনি।’’

Advertisement

অথচ ওরা কেউ দিনমজুর, কেউ খেতমজুর, আবার কেউ কেউ রাজমিস্ত্রির পরিবার থেকে উঠে এসছেন। পড়ুয়াদের এমন সাফল্যে খুশি পরিবারের লোকজনও। সাহিনার মা সাকিলা বিবি, সালমা খাতুনের মা নাজিরা বিবিরা বলছেন, ‘‘মেয়েদের এই সাফল্যে খুব ভাল লাগছে। আজ ওরা আমাদের গর্বিত করেছে।’’ পড়ুয়ারা আরও জানান, বাড়িতে কাজের হাতেখড়ি হলেও স্কুলের শিক্ষক দীপ্তেন্দু রায়, জয়দেব মুখোপাধ্যায়, রফিকুল ইসলামরাও তাদের নানা থিম নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় এ বার রাজ্যের সেরা হওয়ার দিকে তাকিয়ে ইলামবাজারের ওই পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন