পুলিশের নিন্দা বিজেপি-র, উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ অনুব্রতর

মিছিল ঘিরে জেলা সদরে তুলকালাম

রামনবমীতে অস্ত্র-মিছিল থেকে আগেই শিক্ষা নিয়েছিল প্রশাসন। এ বার অনুমতি ছাড়াই শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে ঘুরল এক মিছিল। শেষ পর্বে এসে ব্যারিকেড গড়ে মিছিলকে এগোতে বাধা দিল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৮
Share:

ধুন্ধুমার: বাধা পেয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙছে জনতা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

রামনবমীতে অস্ত্র-মিছিল থেকে আগেই শিক্ষা নিয়েছিল প্রশাসন। এ বার অনুমতি ছাড়াই শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে ঘুরল এক মিছিল। শেষ পর্বে এসে ব্যারিকেড গড়ে মিছিলকে এগোতে বাধা দিল পুলিশ। তার পরেই শুরু হল দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি। শেষমেশ পুলিশের পিটুনি খেয়ে রণেভঙ্গ দিলেন একটি ধর্মীয় সংগঠনের ডাকা মিছিলে যোগ দেওয়া লোকজন।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে বীরভূমের সদর সিউড়ির ওই ঘটনায় সাময়িক ভাবে উত্তেজনা তৈরি হলেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যদিও ঘটনার পর থেকেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শাসকদলের অভিযোগ, ধর্মকে ব্যবহার করে বারবার এলাকার শান্তি বিঘ্ন করার চেষ্টা করছে বিজেপি। মিছিলের নেপথ্যে একটি ধর্মীয় সংগঠন হলেও পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনায় মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি-ও। ঘটনার নিন্দা করে বীরভূমে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করার ডাক দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আবার জেলায় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে আগামী রবিবার সিউড়িতে শান্তি মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। পরে বোলপুর ও রামপুরহাটেও শান্তি মিছিল হবে।

সিউড়ির কড়িধ্যায় দিন কয়েক আগেই রামনবমীর দিন অস্ত্র-মিছিল হয়েছিল। দলীয় পতাকা না থাকলেও মিছিলে নেতৃত্ব ছিলেন বিজেপি এবং সঙ্ঘের নেতারাই। পরে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে পুলিশ। অনুমতি না থাকলেও হনুমান জয়ন্তীর দিন সিউড়িতে মিছিল করে গেরুয়া শিবির প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করবে, এমন খবর প্রশাসনের কাছে ছিলই। তাই মিছিল ঘিরে যাতে কোনও উত্তেজনা না ছড়ায়, তার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বীরভূমের পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ শতাধিক মানুষ সিউড়ির বড়বাগান থেকে মিছিল বের করলে প্রথমে তাতে তেমন বাধা গড়তে পারেনি পুলিশ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ পর্যন্ত মিছিল করা হবে বলে আশ্বাস দেন আয়োজকেরা। কিন্তু মিছিল ক্রমে বেণীমাধব মোড়, মসজিদ মোড়, টিনবাজার, দত্তপুকুর পাড়া ঘুরতে থাকে। ফের দত্তপুকুর থেকে ঘুরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, এসপি মোড়, পোস্ট অফিস মোড় হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ব্যারিকেড গড়ে বাধা দেয় পুলিশ।

পুলিশ বাধা দিতেই সঙ্ঘাত শুরু হয়। মিছিলের লোকজন হুড়মুড়িয়ে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতেই আসরে নামে পুলিশ। লাঠি চালিয়ে দ্রুত ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় জনতাকে। তাতে কয়েক জন জখম হন। পরে বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, ‘‘প্রথমত পুলিশের অনুমতি ছাড়াই মিছিল হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আয়োজকেরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। তখনই পুলিশকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’’ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এর পরেই আসরে নামে বিজেপি। মিছিলে যোগ না দিলেও সিউড়িতে দলীয় কার্যালয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি দাবি করেন, ‘‘এটা স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মীয় মিছিল। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করল।’’ দুপুর ১২টা নাগাদ বিজেপি নেতা যখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ওই কথা বলছেন, তখন পুলিশের হয়ে ভিডিওগ্রাফির দায়িত্বে থাকা দুই সাদা পোশাকের সিভিক ভলান্টিয়ারকে পার্টি অফিসের সামনে ঘিরে ধরে হেনস্থা করেন কিছু বিজেপি কর্মী। মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে নেন এক নেতা। জিজ্ঞাসাবাদের পরে দু’জনকে ছেড়ে দেয় বিজেপি।

এ দিন কাটোয়ার চন্দ্রপুরে হনুমান মন্দিরের উদ্বোধনে এসে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘হনুমানজয়ন্তী একটি পবিত্র দিন। কিন্তু বিজেপি সেই দিন নিয়েও নোংরামি করছে, উস্কানি দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ শান্তিভঙ্গকারীদের পিটিয়ে ঠিকই করেছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘জেহাদি বা জঙ্গিরা যে ভাবে শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, সেই একই কায়দায় বিজেপি বাংলার পরিবেশকে নষ্ট করছে।’’ দিলীপ অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যিনি পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেছিলেন, তাঁর মুখে এ সব কথা মানায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন