বাইরে তখন অবিরাম বৃষ্টি। বক্তৃতা দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার সারেঙ্গায়। ছবি: উমাকান্ত ধর।
দুপুর থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর হুল দিবসের সভায় জনতার ঢল নামল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল সারেঙ্গায়। যা দেখে আপ্লুত শুভেন্দু জোর গলায় বললেন, “মানুষ যে আনন্দে আছে, খুশিতে আছে, জঙ্গলমহলে যে শান্তি ফিরেছে, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এত মানুষের উপস্থিতি তারই প্রমাণ।’’
হুলদিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে সারেঙ্গার মিশন ময়দানে একটি সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল পরিচালিত সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতি। দুপুর ২টো থেকেই টানা বৃষ্টি শুরু হয়। যা দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। পৌনে চারটে নাগাদ শুভেন্দু যখন সারেঙ্গায় পৌঁছন, তখনও থামেনি বৃষ্টি। মিশন ময়দান সংলগ্ন এলাকায় সিধো-কানহুর একটি মর্মর মূর্তির উন্মোচন করেন তমলুকের সাংসদ। এর পর ব্লকের ১২টি আদিবাসী দলের হাতে ধামসা মাদল, দুঃস্থ কৃতী ছাত্রীকে সাইকেল প্রদান করেন। পরে বক্তৃতার সময় তৃণমূল সরকারের কৃতিত্বের খতিয়ান দিয়েছেন বারবার। বলেছেন, জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরার কথা। শুভেন্দু বলেন, “বিগত দিনে হুল দিবস এ ভাবে সরকারি ভাবে পালিত হত না। কিন্তু আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুল দিবস সরকারি ভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। সিধো-কানহু বৃটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। আর এই জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর জন্য আমরা লড়াই সংগঠিত করেছি। জঙ্গলমহলে যে শান্তি ফিরেছে, তার প্রধান কৃতিত্ব আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর।’’
শুভেন্দুর দাবি, “এক সময় লালগড়, গোয়ালতোড়, নয়াগ্রাম, ঝাড়গ্রাম থেকে সারেঙ্গা, রাইপুর, রানিবাঁধ, বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি-সহ গোটা জঙ্গলমহলে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদী শক্তির ডাকে বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা কর্মী থেকে পুলিশ, সিআরপি জওয়ান, সাধারণ মানুষ, সরকারি কর্মচারী খুন হয়েছেন। সারেঙ্গা–গোয়ালতোড়–লালগড় রুটে দিনের পর দিন বাস চলত না। সূর্য ডোবার আগেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত। সাধারণ মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরোতে পারতেন না। কিন্তু আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত চার বছরে জঙ্গলমহলে এক জনও খুন হননি।’’ শুভেন্দুর দাবি, “গোমতী থেকে গোদাবরী – সারা দেশকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদী শক্তি। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ে একের পর এক নাশকতা চালাচ্ছে মাওবাদীরা। কিন্তু এ রাজ্যে আমাদের সরকারের আমলে জঙ্গলমহল পুরোপুরি শান্ত। খুন খারাপি আর নেই।’’
জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জন্যই যে শান্তি ফিরেছে তার সপক্ষে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা রেখেছেন। জঙ্গলমহলে পুলিশ, এনভিএফ, হোমগার্ড মিলিয়ে ২০ হাজার যুবক-যুবতী চাকরি পেয়েছেন। জঙ্গলমহলে স্কুল, কলেজ হয়েছে, সাঁওতালি ভাষায় এক হাজার পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। কেন্দুপাতার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী ছাত্রীরা সাইকেল পেয়েছে। এত বৃষ্টির মধ্যেও মানুষের এত ভিড় দেখে বোঝাই যাচ্ছে জঙ্গলমহলে শান্তি বিরাজ করছে।’’ এ দিনের সভায় বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, সহ-সভাধিপতি বিভাবতী টুডু সহ অনেকে ছিলেন। সভায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এরই পাশাপাশি এ দিন হুল দিবস উপলক্ষে খাতড়ার গুরুসদয় মঞ্চে একটি অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সুপুর থেকে দেন্দুয়া মোড় পর্যন্ত ৭ কিমি দৌড় প্রতিযোগিতা, রক্তদান শিবির হয়েছে। হুল দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে সিমলাপাল, রানিবাঁধ, রাইপুরেও। রাইপুরের সবুজবাজারে সিধো-কানহুর একটি মূর্তি উন্মোচন করেন মুনমুন সেন। ছিলেন জেলা সভাধিপতি।