একটানা দশ বছর সোনামুখী পুরবোর্ড বামফ্রন্টের দখলে। গত পুরসভা নির্বাচনে সোনামুখীতে মুকুল রায়কে এনে ঝড় তুলেছিল তৃণমূল। তাতে অনেকটা এগিয়েও মাত্র একটি আসনের জন্য জয় ছিল অধরা। এ বার তাই জয়ের স্বাদ পেতে সোনামুখীতে দলের প্রথমসারির তিন নেতাকে পাঠাচ্ছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বামেদের ভরসা কিন্তু সেই জেলা নেতারাই।
সোনামুখী পুরসভার বিদায়ী বিরোধী নেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় এ বারও প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের। সংরক্ষণের কোপে পড়ে তাঁর নিজের ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছেড়ে এ বার তাঁকে লড়তে হচ্ছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বামফ্রন্টের দু’বারের বিদায়ী পুরপ্রধান সিপিএম নেতা কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাই এই ওয়ার্ডের যুযুধান দুই নেতার লড়াইয়ের উপর সবারই নজর। লড়াইয়ে নেমেছেন এই পুরসভার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর তথা দাপুটে বিধায়ক দীপালি সাহাও। দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসে শুনিয়ে গিয়েছেন, এ বার পাখির চোখ সোনামুখীই।
তাই পুরভোটের প্রচারে এ বার সোনামুখীতে রাজ্য নেতারা আসছেন শুনে আশাবাদী স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাও। সুরজিৎবাবু বলেন, “গতবার আমাদের জয় হাত ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল। এ বার আর তা হতে দেব না। আমরা জিতব হাসতে হাসতে।’’ তিনি জানান, আগামী সোমবার প্রচারে আসছেন শুভেন্দু অধিকারী। পরের দিন মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জনসভা করার কথা।” সোনামুখীর সভা সেরে সোমবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার ভৈরবস্থান, পাঁচবাগা ও হরেশ্বর মেলায় নির্বাচনী সভা করার কথা শুভেন্দুবাবুর। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার মাচানতলা মোড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করবেন। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “শুভেন্দুর তিনটি সভায় পুরশহরের প্রায় ১২টি ওয়ার্ডের মানুষ উপস্থিত থাকবেন। অভিষেকের সভায় গোটা পুরসভার সব ক’টি ওয়ার্ড থেকেই মানুষ আসবেন।”
১৫ আসনের সোনামুখী পুরসভা দখল করতে গত কয়েক বছরে তৃণমূল কম চেষ্টা চালায়নি। বামফ্রন্টের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থাও আনা হয়েছিল। কিন্তু বোর্ড পাল্টানো যায়নি। তাই এ বার পুরসভা দখল করতে মরিয়া শাসকদল। সুরজিৎবাবুর অভিযোগ, গত ১০ বছরে এই শহরে একটা বাসস্ট্যান্ড, বাইপাস, দমকল কেন্দ্র কিছুই করতে পারেনি বামফ্রন্টের পুরবোর্ড। শালি নদীর সেতু জেলা পরিষদের উদ্যোগে তৃণমূল শুরু করেছে। তাই শহরের উন্নয়ন চাইতে সোনামুখীর মানুষ এ বার তৃণমূলকেই সমর্থন করবে বলে তাঁর আশা।
তৃণমূলের পুরসভা দখলের আশায় জল ঢেলে দিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শেখর ভট্টাচার্য বলেন, “এলাকার মানুষ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা ভাল করেই জানেন। দুই গোষ্ঠীর গোঁজ প্রার্থীও রয়েছেন। এ ছাড়া এবার ৪টি আসনে লড়ছে কংগ্রেস। ফলে ভোট ভাগাভাগি হবে ওদের মধ্যে। তাই আমরা এ বারও গতবারের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে বোর্ড গড়ব।” প্রচারে বড় কোনও নেতা কেন আনা হচ্ছে না? শেখরবাবুর দাবি, ‘‘জয় নিয়ে আমরা দুর্ভাবনায় নেই। তাই প্রচারে রাজ্য নেতাদের নিয়ে আসতে হচ্ছে না। জেলার নেতাদের নিয়েই হয়ে যাবে।” তিনি জানান, সম্প্রতি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র প্রচার করে গিয়েছেন। আবার তিনি আসবেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রার্থীদের নিয়ে ঘরে ঘরে যাওয়ার উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন। সুরজিৎবাবুর অনুন্নয়ণনর দাবি খণ্ডন করে তার পাল্টা দাবি, “বাসস্ট্যান্ড-বাইপাসের মতো বড় কাজ করার কথা রাজ্য সরকারের। ওরাই তো এখনরাজ্যের ক্ষমতায়। করছেন না কেন? আমরা তো প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছি।”
এই পুরসভায় ১৩টি আসনে লড়ছেন বিজেপি প্রার্থীরা। বড় নেতাদের প্রচার নিয়ে আসার ব্যাপারে তাঁদের তরফে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। দলের বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, “বড় জনসভা নিয়ে দলীয় স্তরে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে প্রচার সারছেন প্রার্থীরা। সারা দেশে মোদী হওয়া বইছে। তাই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবু চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সন্ত্রাস চালিয়ে তাঁদের কর্মীদের বহু আসনে দাঁড়াতেই দেয়নি তৃণমুল। যে ৪টি আসনে তাঁরা লড়ছেন, সেখানেও তাদের প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মারধরও চলছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি প্রচারেই জোর দিয়েছেন।