কেন্দ্রে চিঠি প্রশাসনের

নির্দেশে সঙ্কটে জল ধরা

একশো দিনের প্রকল্পে কোনও রায়তি জমিতে কাজ করানো যাবে না বলে সম্প্রতি সরকারি নির্দেশ এসেছে। আর এতেই শুকনো জেলা পুরুলিয়ায় জলসঙ্কট মোকাবিলার কাজ ধাক্কা খাচ্ছে বলে দাবি অনেকের।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০১:৩২
Share:

ফুটিফাটা: নিয়মের গেরোয় রায়তি পুকুরের সংস্কার আটকে। ফাইল চিত্র

একশো দিনের প্রকল্পে কোনও রায়তি জমিতে কাজ করানো যাবে না বলে সম্প্রতি সরকারি নির্দেশ এসেছে। আর এতেই শুকনো জেলা পুরুলিয়ায় জলসঙ্কট মোকাবিলার কাজ ধাক্কা খাচ্ছে বলে দাবি অনেকের। সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনও ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, খাতায় কলমে রায়তি হলেও এই জেলায় বেশ কিছু জমির ধরন আদৌ তেমনটা নয়। আদতে সেগুলি বারোয়ারি।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কোনও ব্যক্তিগত বা শরিকি মালিকানার জমিতে কাজ করানো যাবে না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, পুরুলিয়ায় সরকারি পুকুর বা জলাশয়ের সংখ্যা হাতে গোনা। সমস্ত ব্লকের অধিকাংশ পুকুরই হয় ব্যক্তিগত মালিকানার বা শরিকি। এই নির্দেশের পরে ওই পুকুরগুলিতে একশো দিনের প্রকল্পে সংস্কারের কাজ করানো যাবে না।

এ দিকে, গত মরসুমে এই ধরনের পুকুর সংস্কার করে বিভিন্ন ব্লকে জল সঙ্কটের মোকাবিলা করেছিল প্রশাসন। চলতি গ্রীষ্মেও ওই পুকুরগুলিতে জল রয়েছে। সমস্ত দেখেশুনে ঠিক করা হয়েছিল, এ বছর জেলা জুড়ে আরও হাজার তিনেক পুকুর এবং বাঁধ সংস্কার করা হবে। কোন ব্লকে কোন পুকুর সংস্কার করা হবে, তার তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশ আসায় সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

Advertisement

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘এই জেলার বেশির ভাগ গ্রামে পুকুর বা জলাশয়গুলি রায়তি জমিতে থাকলেও ওই পুকুরগুলির জল বছরের পর বছর ধরে গোটা গ্রামের মানুষজনই ব্যবহার করে আসছেন। এখানে শরিকি বা ব্যক্তি মালিকানার পুকুরের সংজ্ঞাটাই অন্য রকমের। ওই নির্দেশের ফলে পুকুর সংস্কার করে বৃষ্টির জল ধরে রাখার কাজ ধাক্কা খাবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলনে, ‘‘এমন অনেক পুকুর বা বাঁধ আছে, যেগুলির মোট শরিক অনেক। এক কালে হয়তো ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল। এখন খুঁজলে দেখা যাবে, শরিক বাড়তে বাড়তে প্রায় গোটা গ্রামেরই ভাগ রয়েছে ওই পুকুরে।’’ তাঁর দাবি, এই ধরনের পুকুর নামেই শরিকি। কার্যক্ষেত্রে যেন খাস জমির পুকুর! ওই আধিকারিকের দাবি, ওই নির্দেশের ফাঁসে এগুলির সংস্কার বন্ধ হলে সাধারণ মানুষেরই সমস্যা হবে।

পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে একটি নির্দেশ এসেছে। পুরুলিয়া জেলার প্রেক্ষাপটে আমরা নির্দেশ সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে চিঠি লিখেছি। এখনও কোনও জবাব আসেনি।’’

তবে জলের সমস্যা মেটাতে সরকারি জমিকেও যথাসম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘এ বারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি জমিতে একশো দিনের প্রকল্প থেকে ১২ হাজার হাপা খোঁড়া হবে। ওই হাপাগুলি মাপে ছোট হলেও আগামী বর্ষায় বৃষ্টির জল ধরে রাখবে।’’ হাপা হল বড় কোনও জমির মধ্যে মধ্যে খোঁড়া এক ধরনের গভীর কুয়ো। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হাপা খুঁড়ে চাষের ক্ষেত্রে উপকার হতে পারে। কিন্তু এই জেলায় গ্রীষ্মে শুধু চাষ নয়, জলের জন্য রোজকার বেঁচে থাকার লড়াইটাই কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁদের দাবি, পুকুর সংস্কার করে যে কাজ হয়, হাপা খুঁড়ে সেই চাহিদাগুলি মিটবে না।

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও এই দাবিই করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন