বাইকের ধাক্কায় মৃত চিকিৎসক

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের প্রথম গেট-এর কুড়ি মিটার আগে নলহাটিগামী একটি মোটরবাইক খুব জোরে ধীরেন্দ্রনাথবাবুকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়ে পায়ে, ঘাড়ে ও মাথার পিছনে গুরুতর আঘাত পান। জখম চিকিৎসককে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস চক্রবর্তী সহকর্মী চিকিৎসককে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানিয়ে দেন। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৩
Share:

বাক্‌রুদ্ধ: রামপুরহাট হাসপাতালের মর্গের সামনে ধীরেন্দ্রনাথ মুর্মুর পরিজনেরা। (ইনসেট) দুর্ঘটনায় মৃত চিকিৎসক। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

তখন রাত দশটা। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কর্মীরা বারবার চেষ্টা করেও কিছুতেই ফোনে ধরতে পাচ্ছেন না স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ মুর্মুকে। ফোনও বেজে যাচ্ছে। তুলছেন না কেউ! মিনিট সাতেক আগেই ধীরেন্দ্রনাথবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। কিছু পরেই জেনে যান হাসপাতালে আসার পথে মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ধীরেন্দ্রনাথ মুর্মুর (৪৫)।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের প্রথম গেট-এর কুড়ি মিটার আগে নলহাটিগামী একটি মোটরবাইক খুব জোরে ধীরেন্দ্রনাথবাবুকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়ে পায়ে, ঘাড়ে ও মাথার পিছনে গুরুতর আঘাত পান। জখম চিকিৎসককে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস চক্রবর্তী সহকর্মী চিকিৎসককে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানিয়ে দেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালক মনোজ মাল জানান, রেফার হওয়া এক রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি হাসপাতালে বাইরে আসছিলেন। সুনসান জাতীয় সড়কের রাস্তার ধারে তখন কয়েকটি মাত্র দোকান খোলা। মনোজের কথায়, ‘‘আলো-আঁধারির মধ্যে দেখলাম নলহাটি যাওয়ার রাস্তার বাঁ-দিকে একটা মোটরবাইক পড়ে আছে। কিছু দূরে এক জন গোঙাচ্ছেন। আর এক জন মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। কোনও সাড়াশব্দ নেই। কাছে গিয়ে উল্টে দেখতেই ডাক্তারবাবুকে চিনতে পারলাম। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা টোটো ডেকে সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই।’’

Advertisement

পুলিশ তদন্তে জেনেছে, মোটরবাইক চালকের নাম রেন্টু শেখ। রামপুরহাট রেলপাড়ের বাসিন্দা। মদ্যপ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেই চিকিৎসককে ধাক্কা মেরেছে বলে পুলিশের দাবি। রেন্টুও গুরুতর জখম অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ রেন্টুকে আটক করেছে। মোটরবাইকটিও বাজেয়াপ্ত করেছে।

চাকরি-সূত্রে রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়া সংলগ্ন ভাড়াবাড়িতে একা থাকলেও ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম থানার কুখড়িখোপি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ মুর্মু। হাসপাতালের গেট থেকে কিছুটা দূরে তাঁর ভাড়াবাড়ি। রোজই হেঁটে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে হাসপাতালের কাজে যেতে যেতেন। বুধবার রাতেও খাওয়াদাওয়া করে হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বার অপারেশনের জন্য কাজে যাচ্ছিলেন। জাতীয় সড়ক পার হয়ে হাসপাতালের দিকে কিছুটা চলেও এসেছিলেন। তীব্র গতিতে আসা মোটরবাইক তাঁকে ধাক্কা মারে। রামপুরহাট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ধীরেন্দ্রনাথবাবু ২০১৩ সালে যোগ দিয়েছিলেন। সেজো ছেলের দুর্ঘটনার খবর বুধবার গভীর রাতে কলকাতা থেকে ছোট ছেলের কাছ থেকে জানতে পেরে রাতেই গ্রাম থেকে রামপুরহাটের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথবাবুর বাবা লক্ষণ মুর্মু। সঙ্গে এসেছিলেন মেজ ছেলে সুরেন মুর্মু, পড়শি নরেন্দ্রনাথ মুর্মু সহ আরও আত্মীয়-স্বজন। ঘটনার আকস্মিকতায় ভেঙে পড়েছেন সকলেই। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে লক্ষণবাবু কোনও রকমে বললেন, ‘‘ছেলেটাকে কষ্ট করে ডাক্তারি পড়িয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হালও ধরেছিল। বিয়ে করেনি। এখন আর কী থাকল! কোন মুখে আমি বাড়ি ফিরব।’’

ধীরেন্দ্রনাথবাবুর দাদা সুরেন মুর্মু জানালেন, রামপুরহাটে কাজে যোগ দেওয়ার আগে তাঁর ভাই ঘাটাল মহকুমার বীরসিংহ হাসপাতালে পাঁচ বছর কাজ করেছেন। ওখানে পড়তে পড়তেই এমডি পাশ করেন। সুরেনবাবুর কথায়, ‘‘ভাই ১৫ দিন অন্তর বাড়ি যেত। চার দিন আগেই বাড়ি থেকে এখানে এসেছে। বাড়িতে মা, বাবা সহ ১৯ জন সদস্য। পাড়া, প্রতিবেশীহ সকলের কাছে ভাই প্রিয়পাত্র ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন