পেনশনের টাকায় সবুজায়ন শিক্ষকের

ভেবেছিলেন, দোকান থেকে না খেয়ে নিজের গাছের পেয়ার খাবে ছাত্রছাত্রীরা। তাতে আনন্দও থাকবে। মিলবে খাদ্যগুণও। সেই থেকে শুরু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি: শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৫০
Share:

উজ্জ্বল রায়। নিজস্ব চিত্র

নুন মাখানো এক টুকরো পেয়ারার জন্যে স্কুলের সামনের ফেরিওয়ালার কাছে ভিড় জমে পড়ুয়াদের— সেই চেনা ছবি দেখে অন্য ভাবনা আসে ওই শিক্ষকের মনে। ভেবেছিলেন, দোকান থেকে না খেয়ে নিজের গাছের পেয়ার খাবে ছাত্রছাত্রীরা। তাতে আনন্দও থাকবে। মিলবে খাদ্যগুণও।
সেই থেকে শুরু। ৭ বছর আগে অবসর নিয়েছেন উজ্জ্বল রায়। চার দেওয়ালে ঘেরা ক্লাসঘর নয়, এখন সবুজায়নের শিক্ষা দেন উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে। খাতা, বই, কলমের বদলে স্কুলপড়ুয়াদের হাতে তুলে দেন চারাগাছ। তিনি জানান, পেনশনের টাকায় ৪ হাজার ফলের গাছের চারা দিয়েছেন ১১টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। যার বেশির ভাগই পেয়ারা, লেবু। তাঁর কথায়, ‘‘পেয়ারায় রয়েছে ক্যালসিয়াম। পাতিলেবুতে ভিটামিন সি। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই জরুরি।
সদাইপুর থানার আড়াডাঙালিতে আদিবাড়ি। উজ্জ্বলবাবু এখন থাকেন সিউড়ির নতুন ডাঙালপাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, যদুরায় হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার সময় স্কুলের জমি ১ হাজার গাছ লাগিয়ে আরও সবুজ করে তুলেছিলেন। প্রয়াত সহধর্মিনীর নামে গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কাজরী’। পেনশনের টাকাই এখন সম্বল। তা দিয়েই প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে ফলের গাছের চারা নিয়ে যান আশপাশের স্কুলে। এ বার গিয়েছিলেন সিউড়ি ১, ২ আর দুবরাজপুর ব্লকের কয়েকটি স্কুলে। গাছ বিতরণ করেন রামপ্রসাদ রায় হাইস্কুল, সাজিনা হাইস্কুল, কোমা হাইস্কুল, পাথরচাপুড়ি হাইস্কুল, পানুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘আমার দেওয়া চারাগাছ বড় হওয়ার পরে তার ফল স্কুলের তরফে ছাত্রেরা আমাকে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কী আছে?’’
গত ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতর, রাস্তার পাশে, ক্লাব, হাসপাতাল চত্বরে গাছ লাগিয়ে চলেছেন তিনি। প্রচারের আলো এড়িয়েই। শিক্ষক দিবসে সবুজায়নের সেই সেনানীকে সন্মানিত করলেন সিউড়ির পাবলিক অ্যান্ড চন্দ্রগতি মুস্তাফি মেমোরিয়াল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক পবিত্র দাস বক্সী বলেন, ‘‘শিক্ষক দিবসে উজ্জ্বলবাবুকে সন্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত।’’
আর সবুজায়নের সেই সৈনিক বলছেন, ‘‘স্কুলে স্কুলে ঘুরে পড়ুয়াদের হাতে চারাগাছ দিয়ে বলি, পেনশনের টাকায় কেনা চারাগাছ তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি, তোমরা বাঁচাবে তো। ওরা সমস্বরে সায় দেয়। এতেই আমি খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন