TET

লড়াই ছাড়বেন না বরুণ, পীযূষেরা

বীরভূম থেকে প্রায় ৪০ জন টেট উত্তীর্ণ (১৪ সালে) দফায় দফায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। প্রথম তিন দিন অনেকে থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

রামপুরহাটে বাম ছাত্র-যুবদের প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।

তাঁদের মন ভাঙলেও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ছেন না। বৃহস্পতিবার রাতে চাকরির দাবিতে সল্টলেকের করুণাময়ীতে অবস্থানরত ২০১৪ সালে টেট উত্তীর্ণদের উপরে পুলিশি ‘আক্রমণ’-এর পরে এমনই দাবি বীরভূম থেকে এই আন্দোলনে শামিল বরুণ বাউড়ি, পীযূষ চট্টোপাধ্যায়দের। তিন দিন টানা আন্দোলনে শামিল হওয়া পরে শরীর না-দেওয়ায় তাঁরা বৃহস্পতিবার সকালেই বাড়ি ফিরেছিলেন।

Advertisement

‘‘একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপরে রাজ্য সরকারের পুলিশের এমন আক্রমণ অমানবিক, বর্বরোচিত।’’ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলি বললেন বরুণ বাউড়ি। খয়রাশোলের শিমজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা বরুণ ১৪ সালে টেট উত্তীর্ণ হন। তিনি বললেন, ‘‘এক কাপড়ে স্নান-খাওয়া ছেড়ে সোম থেকে বুধ— তিন দিন আন্দোলনে শামিল ছিলেন আমিও। শরীর দিচ্ছিল না। তাই বৃহস্পতিবার সকালে ফিরেছি। রাতে সহযোদ্ধাদের উপরে এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার দেখতে বুক ফেটে যাচ্ছিল।’’ একই বক্তব্য মহম্মদবাজারের শাওড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ পীযূষ চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনিও টানা তিন দিন অনশন মঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবারই গ্রামে ফিরেছিলেন।

হিংলো ঘেঁষা ছোট্ট গ্রামে অসুস্থ বাবা-মা, দাদা, বৌদি, ভাইজি-সহ ছ’জনের পরিবার বরুণের। কৃষি থেকে সামান্য আয়ের উপরে সংসার চলে। অভাবের মধ্যেই বাংলায় স্নাতকোত্তর ও বিএড করেছেন বরুণ। মধ্য তিরিশের ওই যুবকের আক্ষেপ, ‘‘যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ভেবেছিলাম চাকরি পেয়ে অভাব ঘুচবে। মায়ের সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছে। গত কয়েক মাসে আশা জেগেছিল। ভেবেছিলাম, চাকরি পেলে মায়ের ভাল ভাবে চিকিৎসা করাব। কিন্তু আট বছরেও লড়াই শেষ হল না।’’

Advertisement

প্রায় একই অবস্থা পীযূষদের পরিবারেও। খুব কম বয়সে দাদা মারা যাওয়ার পরে বৌদি, ছ’বছরের ভাইজি, বাবা-মা নিয়ে মোট পাঁচ জনের সংসার। আয় বলতে সামান্য ক’টি টিউশন আর বৃদ্ধ বাবার জমি জরিপের কাজ। সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর ও বিএড করেছেন পীযূষ। বলেন, ‘‘কোনও রকমে সংসার চলে। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে চাকরি পেলে সবটা অন্য রকম হতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপরে এমন পুলিশি আক্রমণ কেন হবে?’’

জানা গিয়েছে, বীরভূম থেকে প্রায় ৪০ জন টেট উত্তীর্ণ (১৪ সালে) দফায় দফায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। প্রথম তিন দিন অনেকে থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে থাকা পীযূষ, বরুণেরা বলছেন, ‘‘আট বছর লড়তে লড়তে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। বৃহস্পতিবারের রাতে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে মন ভাঙলেও, লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement