ডাল বীজের চাষ করে লাভের আশা চাষিদের

জমি ফেলে রাখা নয়। বা জোর করে ধান লাগানো নয়। বরং ডাল বা তৈল বীজের চাষ করলে লাভের মুখ দেখবেন চাষিরা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

রাজনগর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share:

এই সেই কালো কলাই। — নিজস্ব চিত্র

জমি ফেলে রাখা নয়। বা জোর করে ধান লাগানো নয়। বরং ডাল বা তৈল বীজের চাষ করলে লাভের মুখ দেখবেন চাষিরা।

Advertisement

এ বার খরিফ মরসুমের আগেই জেলার বেশ কিছু চাষিকে এমন পরামর্শই দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞানকেন্দ্র পল্লিশিক্ষা ভবনের কৃষি বিজ্ঞানীরা। পরামর্শের সঙ্গে মিলেছিল বীজ অনুখাদ্য, আগাছানাশক, কীট নাশক। উদ্দেশ্য জমিকে অনাবাদী না রেখে সেখানে ফসল ফলিয়ে লাভের মুখ দেখুন চাষিরা।

সেই পরামর্শ মেনেই চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন রাজনগরের পাতাডাঙা ও ফরিদপুর গ্রামের বেশ কয়েক জন চাষি। এ বার তাঁরা কালো কলাই ‘সুলতা’ ভ্যারাইটি চাষ করেছিলেন। দারুণ ফসল হয়েছে। উচ্ছ্বসিত চাষিরা বলছেন, ‘‘পরের বার দ্বিগুণ জমিতে চাষ করব।’’ তবে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগে ও সহযোগিতায় বিশ্বভারতী কৃষি বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে লোককল্যাণ পরিষদ ও সৃজনীর মতো অলাভজনক সংস্থা।

Advertisement

দিন কয়েক আগে রাজনগর ঘুরে গিয়েছেন রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞানকেন্দ্র কৃষি বিজ্ঞানী সুব্রত মণ্ডল। ফসল দেখে খুশি সুব্রতবাবুর আশ্বাস, পরের বার আরও বেশি করে চাষিদের পাশে থাকবেন তাঁরা। বিশ্বভারতী কৃষি বিভাগের সঙ্গে যে সংস্থা সাহায্য করছে সেই লোককল্যাণ পরিষদ জানাচ্ছে, ‘‘কম বেশি প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে এ বার দুটি গ্রামে কালো কলাই চাষ হয়েছে। রাজনগরের পাতাডাঙা গ্রামের চাষি দাতাকর্ণ মণ্ডল, অমল কুণ্ড ফাল্গুনী মণ্ডল, লালচাঁদ ঘোষ সকলেই এ বার গ্রামের কাছে রাজপুর মৌজায় গড়ে এক বিঘা করে কালো কালাই চাষ করছেন। ভাদ্র মাসে লাগানো হয়েছিল। ৯০ দিনের মাথায় ফসল ঘরে তোলার জন্য রেডি।’’

দাতাকর্ণরা বলছেন, বহুবছর ধরে এই সময়টায় এই জমিতে কোনও ফসল হয়নি। মাত্র ১০০০ টাকা খরচ হয়েছে প্রতিবিঘা ডাল চাষে। এ বার বিঘা প্রতি এক ক্যুইন্টালের বেশি ফসল মিলবে বলে অনুমান। বাজার দর গড়ে ১৫০ টাকা কিলো। সঙ্গে গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে গাছগুলোকে। একই বক্তব্য ফরিদপুরের চাষি অমল চক্রবর্তী জয়ন্ত চক্রবর্তীদের। তাঁরা বলছেন, সত্যি বলতে কী ধানের বদলে ডাল চাষ এতটা ভাল হতে পারে আগে বুঝিনি।

বিশ্বভারতী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষায় ভাল বৃষ্টি না হলে তো বটেই, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও জেলার এমন কিছু জমি রয়েছে যেখানে ধান চাষ করতে পারেন না। বছরের পর বছর সেই জমি অনাবাদী থেকে যায়। বৃষ্টি হচ্ছে দেখে কেউ কেউ জোর করে ধান লাগালেও সেচ ব্যবস্থার অভাবে সেই ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। জমি ফেলে না রেখে বা প্রথা মাফিক ধান চাষ না করে এই পরিস্থিতিতেই চাষিরা কী অন্য ফসল চাষ করবেন অথচ লাভের মুখ দেখবেন সেটাই মূল উদ্দশ্য ছিল। এমনিতেই সরকার ডাল শষ্যের উৎপাদন বাড়াতে জোর দিচ্ছে, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের আওতায় গুচ্ছ প্রদর্শন ক্ষেত্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগ। বিজ্ঞানী সুব্রত মণ্ডল যিনি প্রকল্পে নোডাল পার্সন হিসাবে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কালো কলাই সুলতা ভ্যারাইটি এবং সাদা তিল চাষের কাথা ভাবা হয়েছিল। দুটি কারণে, এক সেচ না দিলেও দিব্যি
এই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা। ধান চাষের থেকে সময়ও অনেক কম লাগে।’’

এমন বেশ কয়েকটি প্রদর্শন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে রাজনগর খয়রাশোল, মহম্মদবাজার, ইলামবাজার,
লাভপুর এলাকায়।

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, যেহেতু লোকবল কম তাই লোক কল্যাণ পরিষদের মতো দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সহযোগী হিসাবে নেওয়া হয়েছে। চাষ নিয়ে যে সংস্থা জেলায় দীর্ঘ দিন কাজ করছে তাঁদেরকেই তাঁরা সুযোগ দিয়েছে। জাতীয় মহিলা কৃষক স্বশক্তি করণ প্রকল্প ও ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার শেড ম্যানেজম্যান্ট প্রোগ্রামের মতো দুটি প্রকল্প নিয়ে জেলার চারটি ব্লকে কাজ করা লোককল্যাণ পরিষদ। জেলা কো-অর্ডিনেচর দুর্গা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজনগর ইউনিটের সদস্য অভিজিৎ দাস বলছেন, ‘‘এমনিতেই চাষিদের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যেই কাজ করছি। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাশে থাকাটা দারুণ ব্যাপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন