Crime

রক্ষীর গুলি কারখানায়, নিহত যুবক

পুলিশ সূত্রে খবর, কারখানার যে রক্ষী গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০১:২৬
Share:

সেই কারখানা। নিজস্ব চিত্র

কারখানায় চুরি করতে ঢুকেছিল এক দল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, কারখানার নিরাপত্তারক্ষীর ছোড়া ছররা গুলিতে তাঁদের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ভোর ৩টে নাগাদ বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া থানার ঘুটগোড়িয়া শিল্পাঞ্চলের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবক প্রসেন লোহার (৩৩) ঘুটগোড়িয়ার মাঝপাড়ার বাসিন্দা। শনিবার ভোরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁর দেহ ওই কারখানা চত্বর থেকে উদ্ধার করে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, কারখানার যে রক্ষী গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে নিহতের পরিবারের তরফে কেউ শনিবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেননি। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে ওই রক্ষীকে গুলি চালাতে হল, তা জেরা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে। তদন্তে তাঁর কোনও রকম দোষ প্রমাণিত হলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিকে, লোহার রড তৈরির ওই কারখানার ম্যানেজার বিদ্যুৎ বিদ শনিবার বড়জোড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, “কারখানার ভিতরে এক জায়গায় লোহার টুকরো জড়ো করে রাখা ছিল। গত কয়েকদিন ধরেই লোহা চুরি করতে কারখানায় ঢুকছিল দুষ্কৃতীরা। বাগে পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাতে কয়েকজন ফের লোহা চুরি করতে ঢুকেছে বলে রক্ষীদের নজরে আসে। তাঁরা বারণ করলে দুষ্কৃতীরা উল্টে পাথর ছুড়তে শুরু করে। ভোজালি বার করে হামলা করতে যায়। এই পরিস্থিতিতেই এক রক্ষী তাঁর লাইসেন্স করা বন্দুক থেকে শূন্যে একটি গুলি ছোড়েন। লোহার স্তূপের উপরে থাকা ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। বাকিরা পালায়।’’ পুলিশ সুপার জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

এই ঘটনায় কিছু প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, রাতে গুলি চালালেও ভোরে কেন পুলিশকে খবর দেওয়া হল? কারাখানার ম্যানেজারের দাবি, ‘‘ওই জায়গাটি অন্ধকার। কেউ যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, ঘটনার সময়ে হট্টগোলে প্রথমে বোঝা যায়নি। ভোরে আলো ফুটলে ওই যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল।’’

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁদের চার জন বন্দুকধারী-সহ ২৮ জন রক্ষী রয়েছেন। শুক্রবার রাতে পাহারায় ছিলেন প্রায় ১৮ জন রক্ষী। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রসেন-সহ জনা পনেরো দুষ্কৃতী পাঁচিল টপকে কারখানায় লোহা চুরি করতে ঢুকেছিল। ১৮ জন রক্ষী থাকলেও দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা তাঁরা করতে পারলেন না কেন? কেন গুলি চালাতে হল? কর্তৃপক্ষের দাবি, রক্ষীদের উদ্দেশে পাথর ছোড়ার মধ্যেই দুষ্কৃতীরা ভোজালি নিয়ে মারার হুমকি দেয়। তখন ভয় দেখাতেই শূন্য গুলি ছোড়া হয়েছিল।

প্রসেনের স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তিনি একটি কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। অবসর সময়ে লটারির টিকিট বিক্রি করতেন। মৃতের পরিজনেরা অবশ্য প্রসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর স্ত্রী বেলি লোহার কোনও রকমে বলেন, ‘‘তিন সন্তানকে নিয়ে এ বার কোথায় যাব?’’

কারখানা সূত্রে খবর, ২০০৪ সালে চালু ওই কারখানায় বর্তমানে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কারখানার আইএনটিটিইউসি সভাপতি গণেশ মণ্ডল বলেন, “কারখানার স্বার্থের সঙ্গে বহু শ্রমিকের ভবিষ্যত জড়িয়ে রয়েছে। তাই কারখানার ক্ষতি হয় এমন কোনও বিষয় আমরা প্রশ্রয় দেব না। তবে ওই যুবকের পরিবারের কোনও রকম সমস্যা হলে, আমরা সাহায্য করব।” সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী বলেন, “শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলিতে অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে পুলিশের যে আরও সক্রিয় হওয়ার দরকার, এই ঘটনা প্রমাণ করল।’’ পুলিশ সুপারের অবশ্য দাবি, ‘‘বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে নিয়মিত পুলিশি টহল চলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন