ভোগান্তি বিচারপ্রার্থীদের

দেড় মাস ধরে এজলাস বয়কট

দেড় মাস ধরে এক বিচারকের এজলাস বয়কট করে রেখেছেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের আইনজীবীরা। তার ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থী। পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর থেকে জেলা আদালতের বিচারক (সিভিল জজ, সিনিয়র ডিভিশন) লীলাময় মণ্ডলের এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৯
Share:

দেড় মাস ধরে এক বিচারকের এজলাস বয়কট করে রেখেছেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের আইনজীবীরা। তার ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থী। পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর থেকে জেলা আদালতের বিচারক (সিভিল জজ, সিনিয়র ডিভিশন) লীলাময় মণ্ডলের এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা। ফলে এই আদালতের বিচার প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে সে দিন থেকেই।

Advertisement

কেন এই বয়কট?

পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতুল মাহাতোর দাবি, ওই বিচারকের আচরণ নিয়ে আইনজীবীদের আপত্তি রয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেই ওই বিচারকের এজলাস বয়কটের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এজলাসে এক জন বিচারকের আইনজীবীদের প্রতি যে আচরণ থাকা প্রত্যাশিত, এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমের একাধিক উদাহরণ রয়েছে আমাদের কাছে। আদালতের অন্য কোনও বিচারকের এজলাস তো বয়কট করা হয়নি।’’ আইনজীবী মহল থেকেই অবশ্য জানা যাচ্ছে, বছর দুয়েক আগে এই আদালতেরই এক বিচারকের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বার অ্যাসোসিয়েশন সমস্ত এজলাসই বয়কট শুরু করেছিল। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রবিশঙ্কর ত্রিপাঠী জানান, সেবার হাইকোর্টের ও বার কাউন্সিলের প্রতিনিধির হস্তক্ষেপে দু’মাসেরও বেশি সময় পরে সমস্যা মেটে।

Advertisement

অতুলবাবুর আরও দাবি, ‘‘এ বার কেন আমরা এই নির্দিষ্ট এজলাস বয়কট করছি, তা হাইকোর্টকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিলিপিও হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।’’ সংশ্লিষ্ট বিচারকের এজলাসে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মীরা জানান, এই মর্মে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করবেন না। কর্মীরাও কিছু বলতে পারেননি।

যে বিচারকের এজলাস বয়কট চলছে, সেটি আদালতের পরিভাষায় ফাইলিং কোর্ট। এখানে যে কোনও দেওয়ানি মামলা করতে পারেন বিভিন্ন মানুষজন। আইনজীবীদের বয়কটের ফলে, এই এজলাসের সমস্ত মামলা ঝুলে রয়েছে। যার জেরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজনকে হয়রান হতে হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের বারবার এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। তাঁদেরই অন্যতম, পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা পবন খেতানের ক্ষোভ, ‘‘সেই ২০০৪ সাল থেকে এই এজলাসে আমাদের মামলা চলছে। হাইকোর্টের নির্দেশে আমি ও আমার এক বন্ধু এই এজলাসে কয়েক লক্ষ টাকা জমাও দিয়েছি। কিন্তু, ২ ডিসেম্বর থেকে আমাদের মামলার শুনানি থমকে রয়েছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বিচারপ্রার্থীর কথায়, ‘‘ চেয়েচিন্তে টাকা জোগাড় করে আসতে হয়। কিন্তু আইনজীবীরা কেউ কোনও কাজই করছেন না। আমাদের মতো বহু মানুষ বিচার চাইতে এসে বার বার খালি হাতে ফিরছেন।’’ পবনবাবুর প্রশ্ন, আইনজীবীদের সমস্যার খেসারত বিচারপ্রার্থীরা কেন দেবেন?

এই প্রশ্ন শুনে অতুলবাবুর জবাব, ‘‘তা হচ্ছে, কিন্তু ভাল কিছুর জন্য কিছু জিনিসকে মেনে নিতে হয়।’’ কিন্তু, মেনে নেওয়া আরও কত দিন, সে প্রশ্নও আপাতত ঝুলে রইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন